আদালত চত্বরে সাবেক মন্ত্রীসহ যেসব আসামির ওপর হামলা হয়েছে বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, আদালত চত্বরে আসামিদের ওপর হামলা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমি দু-তিনটা বড় দলের সঙ্গে কথা বলেছি যে তাদের কোনো কর্মী থাকলে যাতে থামানোর চেষ্টা করা হয়। দলগুলোও বলেছে যে তাদের যথেষ্ট পরিষ্কার নির্দেশনা আছে। তারপরও মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া থাকলে (দলগুলো বলেছে) তাদের কিছু করার নেই। তারা আরও চেষ্টা করবেন।
আরও পড়ুন: জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল: আইন উপদেষ্টা
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রনালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আদালত চত্বরে সাবেক মন্ত্রী দীপু মনিসহ যেসব আসামিদের ওপর হামলা হয়েছে, এ নিয়ে জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। আপনাদের কী মনে আছে, আপনাদের একজন অগ্রজ সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে কীভাবে নির্মমভাবে রক্তাক্ত করা হয়েছিল? তখন আপনারা কী এই প্রশ্নটি করতে পেরেছিলেন? আপনাদের টিভিতে দেখাতে পেরেছিলেন? একটি মন্ত্রিসভাকে জনগণের শত্রুর পর্যায়ে নিয়ে আসার দায় তো সাবেক সরকারের।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) মন্ত্রিসভার সদস্যদের এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল, একটা জনরোষ তৈরি হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের ওপর তো জনরোষ ছিল না, তাকে রক্তাক্ত করা ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এভাবে অনেক সাংবাদিককে অপদস্ত করা হয়েছিল। আমি নাম নেব না। আপনারা তো রিপোর্টই করতে পারতেন না। আমি নাম নেব না, আপনাদের (সাংবাদিক) কারো কারো সরাসরি ইন্ধন ছিল এসব কাজে। এখন আপনারা প্রশ্ন তুলেছেন, আমি মনে করি আদালতে যাওয়ার সময় কারো ওপর হামলা সমর্থনযোগ্য না।’
আরও পড়ুন: আশা করি সাকিবকে গ্রেপ্তার করা হবে না: আসিফ নজরুল
আইন উপদেষ্টা বলেন, গত ১৫ বছরে যারা চাকরি হারিয়েছেন, নিরাপত্তার ভয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন, জীবিকা হারিয়ে ঢাকা শহরে লুকিয়ে থেকেছেন, গুম-হত্যার শিকার পরিবার তাদের ক্ষোভ, ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। তবে সেই বহিঃপ্রকাশকে সমর্থন করছি না, প্রশ্নই আসে না। পুলিশ প্রশাসন বাধা দিলে বা শক্তিপ্রয়োগ করলে তখন তো বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নেবে।
পুলিশ খুব ডিমরালাইজড (মনোবলহীন) হিসেবে আছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এটা সাবেক সরকারের অবদান। তারা পুলিশকে এমন একটি গণশত্রু বাহিনীতে পরিণত করেছিল, পুলিশ সাহস করে তাদের বাধা দিতে পারে না। তখন বিক্ষুব্ধরা বলে ‘তোরা তো উনার (হাসিনার) পুলিশ।’ তারপরেও আমরা বিভিন্ন কৌশলে চেষ্টা করছি এ ক্রাউডটা (ভিড়) কীভাবে কমাতে!
নির্বাচন অনুষ্ঠানে ৯০ দিনের একটি বাধ্যবাধকতা আছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এমন এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রথমে অনুধাবন করা উচিত, তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা কী ছিল! ভুয়া নির্বাচন করা যাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল, তারা আগে নিজেরটা বিবেচনা করুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের একটা লেখা দেখলাম, তিনি আগের সরকারকে স্বৈরাচারী-অগণতান্ত্রিক বলেছেন, তার আগে আত্মসমালোচনা করা উচিত, এ স্বৈরাচারী সরকার এসেছে, কার অভিভাবকত্বে? কাজেই তার কথায় আমাদের পরিচালিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফরাসি, কানাডা ও মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
তিনি বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট আইন বিশেষজ্ঞরা আছেন, আমরা সবসময় সবকিছু সবদিকে দৃষ্টি রেখেই করব। আমরা বিশ্বাস করি, ডকট্রিন অব নেসেসিটি বলে একটা কথা আছে। সংবিধান পরিবর্তন কীভাবে হয়েছিল, সেটা নিয়ে আদালতে মামলা আছে। এখন এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’