জামলাপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলায় আহত এক ভিক্ষুক পরিবারকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটক করে জেল হাজতে প্রেরণের ঘটনায় পুলিশের চারজন উপপরিদর্শক (এসআই) বরখাস্ত ও দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ওই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে বুধবার সকালে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন।
বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন-সরিষাবাড়ী থানার এসআই আলতাব হোসেন, সাইফুল ইসলাম, ওয়াজেদ আলী, মুনতাজ আলী। এছাড়া দুই পুলিশ কনস্টেবল মোজাম্মেল হক ও সাথী আক্তারকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসী বাজার এলাকার ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের জমি জবর দখলে নিতে সোমবার দুপুরে একই গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী’র ছেলে মজিবর রহমান ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে বসতবাড়ীতে হামলা ও ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হামলায় গুরুতর আহত ভিক্ষুক আব্দুল জলিল (৬০), তার স্ত্রী লাইলী বেগম (৫০), আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), ওয়াজকরনী (২৫), জসিম (৩২), ছালমা (৩৮), শুভ (১৯), শাহীদা (৫৫) পুলিশি হেফাজতে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এদিকে হামলার পর মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিৎসাধীন চার জনসহ ১৫ জনকে আসামি করে সরিষাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর মঙ্গলবার পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এজাহারভুক্ত আহত ওই চার আসামিদের আটক করেন। এসময় চিকিৎসাধীন ওই চার আসামি পুলিশের সাথে যেতে রাজি না হওয়ায় হাসপাতালের শয্যা থেকে তাদেরকে টেনে হেঁচড়ে থানায় নিয়ে আসে। পরে কিছু সময় তাদের থানাহাজতে রেখে বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
আব্দুল জলিলের স্বজনেরা অভিযোগ করে বলেন, সোমবার রাতে আব্দুল জলিল থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ উল্টো আব্দুল জলিলকে থানায় আটকে রাখে। পরে সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি কর। রাতে উল্টো ওই ভিক্ষুক পরিবারের উপর মামলা দেয়া হয়।
সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী বলেন, আহতদের চিকিৎসা চলাকালীনই পুলিশ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে। চিকিৎসাধীন আসামিদের যেভাবে আটক করা হয়েছে তা অমানবিক।
পড়ুন: ছেলের জন্মদিনে বন্ধুদের জন্য ফেনসিডিল এনে আটক বাবা
সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর রকিবুল হক বলেন, মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার রাতে আব্দুল জলিলসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এরপর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ায় পরই তাদেরকে আটক করা হয়।
জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান, বিষয়টি জানতে পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ঘটনা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাকির হোসেন সুমনকে দায়িত্ব দিয়ে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।