রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) জন্য বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আয়োজিত হস্তান্তর অনুষ্ঠানে (গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি) স্বপ্নের প্রকল্পটির রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটম আরএনপিপি কর্তৃপক্ষের কাছে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি হস্তান্তর করে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ জ্বালানি হস্তান্তর করেন।
আরও পড়ুন: সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় রূপপুরে পৌঁছাল ইউরেনিয়াম
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়।
রাশিয়া থেকে একটি বিশেষ এয়ার কার্গোর মাধ্যমে ইউরেনিয়ামের চালানটি ঢাকায় এসে পৌঁছায়। পরদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সড়কপথে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাশিয়ার একটি কারখানা থেকে সরাসরি একটি বিশেষ বিমানে করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পারমাণবিক জ্বালানি পাঠানো হয়।
রাশিয়ার নভোসিবির্সক কেমিক্যাল কনসেনট্রেট প্ল্যান্টে (এনসিসিপি) এই জ্বালানি উৎপাদিত হয়, যা রোসাটমের জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তেভেলের সহায়ক প্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন: রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের 'গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি'তে রাশিয়ার রোসাটম থেকে ইউরেনিয়ামের নতুন ব্যাচ গ্রহণ
রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটম ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে দু’টি ইউনিটে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি ২০২১ সালের অক্টোবরে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য চুল্লি ২০২২ সালের অক্টোবরে বসানো হয়।
সরকার ২০০৯ সালে আরএনপিপি প্রকল্প স্থাপনের ধারণাটি হাতে নেয় এবং ২০০৯ সালের ১৩ মে রাশিয়ার সঙ্গে ‘পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার’ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।
২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে নির্মাণকাজ সম্পাদনের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাষ্ট্রীয় রপ্তানি ঋণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে মস্কোর সঙ্গে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাধারণ চুক্তি (জিসি) সই করে সরকার।
বাংলাদেশ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আরএনপিপির জন্য ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি আর্থিক চুক্তি সই করে। প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ এই অর্থ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিট এবং ২০২৫ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে।
আরও পড়ুন: রূপপুরের জন্য ইউরেনিয়াম সংগ্রহে রুশ কোম্পানির সাথে প্রাথমিক চুক্তি