চলতি বছরেই পরীক্ষামূলকভাবে দেশে ফাইভ-জি চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বুধবার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত 'বিএসআরএফ সংলাপ'-এ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব তথ্য জানান।
বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা শাহেনুর মিয়া। সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যান্য নেতারা ।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, সব প্রস্তুতি শেষ। আপনারা জেনে খুশি হবেন রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক চলতি বছর পরীক্ষামূলকভাবে পঞ্চম প্রজন্মের বা ৫জি সেবা চালু করবে। আর আগামী বছর ২০২২ সালে দেশের অন্যসব মোবাইল অপারটেরদের জন্য ৫জি তরঙ্গ নিলাম করবে সরকার
তিনি বলেন, আমরা বড় ধরনের জাম্প করতে চাই, পৃথিবীতে ৫জি এসেছে, ২০১৮ সালের জুলাইতে ৫জি পরীক্ষামূলক চালু করে দেখেছিলাম। ২০২১ সালের মধ্যে ৫জি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করব।
আরও পড়ুন: শিক্ষাকে সভ্যতার বিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে হবে: মোস্তাফা জব্বার
টেলিটক পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে জব্বার বলেন, টেলিটক ইতিমধ্যে পাঁচটি সাইট রেডি করেছে। এটি ২০২২ সালে সম্প্রসারণ করব এবং ২০২২ সালে প্রথম কোয়ার্টারে একটি স্পেকট্রাম অকশন করব। আশা করি সব অপারেটরেরা ২০২২ সাল থেকে ৫জি প্রযুক্তি বিকাশ ঘটাতে পারবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে দেশে ৪জি সেবা চালু আছে। নতুন করে ৫জি চালু হলে ইন্টারনেটের গতি কয়েকগুণ বাড়বে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এলাকায় ৫জি প্রযুক্তি চালুর পরিকল্পনা জানিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ৫জি কেবলমাত্র সাধারণ প্রযুক্তি না, এটি সব প্রযুক্তির মহাসড়ক। ৪জি নেটওয়ার্ক ভয়েস কল ও ইন্টারনেটের সাধারণ চাহিদা পূরণ করবে। কল কারখানার জন্য ৫জি প্রযুক্তি দিতে পারি, হাইটেক পার্কে ৫জি প্রযুক্তি দিতে পারি, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের মহাসড়ক নির্মাণের দায়িত্ব আমরা পালন করে যাচ্ছি।
বর্তমানে ৯৫ ভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইল নির্ভর। এই মোবাইল নির্ভরতার বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ৪জি সম্প্রসারণ, সব অপারেটররা তা করেছে। কিন্তু এখনো কিছু যান্ত্রিক অসুবিধা রয়ে গেছে যার জন্য কলড্রপ বা নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, ইন্টারনেট গতি পাওয়া যায় না এসব মোকাবিলা করতে হয়। এসব সমস্যা সাধানের কাজ করা হচ্ছে।’
সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ফেসবুককে দায়ী করেছেন অনেকে এ নিয়ে এক প্রশ্নে জব্বার বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো একটি দিক মাত্র, সব কিছুই যখন ডিজিটাল হচ্ছে সেই তথ্য নিরাপত্তা দিতে না পারলে উল্টো বিপদ ডেকে আনবে। ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের আইনের আওতায় যদি ব্যবস্থা নেওয়া যায়… আমি লক্ষ্য করছি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ আইনের অপব্যবহার হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনেরও অপব্যবহার হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিরাপত্তা হরণ করার জন্য নয়, এটি অপব্যবহার রোধ করতে হবে।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ফাইভ-জি চালু হবে: মোস্তফা জব্বার
মোস্তফা জব্বার বলেন, ফেইবুক, ইউটিউব যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি, সব নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের সমাজ ব্যবস্থার সাথে তারা নির্দেশ তৈরি করেছে, তারা বাংলাদেশের ইস্যুগুলো উপলব্ধি করে না। বর্তমানে তাদের সাথে প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ হয়, কুমিল্লাসহ অন্যান্য ঘটনায় দৃষ্টান্ত দিতে পারি তারা ৩০০ লিঙ্কের মধ্যে ২৬৬টি লিঙ্ক বন্ধ করে দিতে পেরেছে। আমি আশা করি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তারা বিবেচনা করবে। আমাদের যে সক্ষমতা আছে তা হল কোনো সাইট আমরা তাৎক্ষণিক বন্ধ করতে পারি। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে ইচ্ছা করলে ফেসবুকের লাইভ বন্ধ করতে পারব। যখন কোনো সমস্যা হবে তখন প্রয়োগ করতে পারব। সহজ উপায় ফেইবুক, ইউটিউব বন্ধ করে দিতে পারি। কিন্তু মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা সমাধান নয়। যেটা প্রয়োজন মাথা ব্যথা হয়েছে ওষুধ দিয়ে সারাতে হবে, এ জন্য এসব বন্ধ করা হয়নি। দেশে চার কোটির বেশি ফেসবুক ব্যবহার করে, তারা বুঝেছে এখানে ব্যবসা বিশাল এবং তাদের আয় বাড়ছে।
অবৈধ মোবাইল সেট বন্ধের উদ্যোগ থেকে সরে আসার বিষয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, এটি উপকারের চেয়ে অপকার বেশি করছে, জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। দেশে ২জি সেট ব্যবহারকারী সংখ্যা বেশি, তাদের নিবন্ধনের সক্ষমতা নেই। আমরা মাঝে মধ্যেই অবৈধ সেট বিষয়ে অভিযান চালাই, অবৈধ সেট বন্ধের সক্ষমতা আমরা তৈরি করেছি।
আরও পড়ুন: মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ টিকা পাবে: সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী