বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি ভিত্তিতে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ১ হাজার জনেরও বেশি।
ইউএনবি নিউজ ডেস্কে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, ঢাকা ও ফেনীতে ৯ জন করে, সিলেট ও নরসিংদীতে ৬ জন করে, সিরাজগঞ্জে ২৩ জন, লক্ষ্মীপুরে আটজন, বগুড়ায় পাঁচজন, রংপুরে চারজন, মাগুরা, পাবনা, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে তিনজন করে এবং জয়পুরহাট ও শরীয়তপুরে দুইজন করে মারা গেছেন। এছাড়া গাজীপুর, কক্সবাজার, ভোলা, হবিগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও বরিশালে একজন করে মারা গেছে।
এছাড়া সারাদেশে সংঘর্ষ ও হামলায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ।
ঢাকায় সংঘর্ষে অন্তত সাতজন নিহত ও আড়াই শতাধিক আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের ছাত্র তাওহিদুল (২২), ওবায়দুল্লাহ সিদ্দিক (২৩) ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রামিজউদ্দিন হাবিব রূপ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানান, মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
এছাড়া সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত।
আরও পড়ুন: সোমবার থেকে ৩ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা
নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায় আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছূ সংখ্যক যানবাহন, আওয়ামী লীগের অফিস, থানা ও অন্যান্য স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সকাল থেকে বিক্ষোভে অংশ নেয় সাধারণ মানুষ।
প্ল্যাটফর্মটি শনিবার একটি বিশাল সমাবেশ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। এর ফলে সকাল থেকে রাস্তায় যান চলাচল কম ছিল। শপিংমল ও দোকানপাটও বন্ধ ছিল।
ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যক্ষদর্শী, আমাদের সংবাদদাতা ও ফটো সাংবাদিকরা জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায় রাস্তায় নামলে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে।
অনেক জায়গায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এর ফলে সহিংস সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ অনেকে নিহত ও আহত হন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, খুলনা, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ক্রমবর্ধমান এ সহিংসতার মধ্যে সরকার রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে।
ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সদরে কারফিউ জারি করা হয়।
এদিকে আন্দোলনকারীদের গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ নেওয়ার অধিকার সব নাগরিকের রয়েছে এবং জোর দিয়ে বলেছে, পুলিশকে অবশ্যই আইনি নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে।
একইসঙ্গে পুলিশকে পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারফিউ প্রত্যাখ্যান, লংমার্চ টু ঢাকা এগিয়ে সোমবার