ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত সন্দেহভাজন দুই আসামি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ।
শনিবার (১৩ জুলাই) ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হারুন বলেন, 'এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছি এবং দুজন এখনও ভারতে রয়েছে।’
গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, পুলিশ অযথা কাউকে তলব ও হয়রানি করছে না। ‘তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
হারুন বলেন, বাংলাদেশে থাকা অপরাধীদের দ্রুত ধরতে সক্ষম হয়েছে ডিবি।
আরও পড়ুন: ডিএনএ নমুনা দিতে শিগগিরই ভারতে যেতে পারে আনার পরিবার: ডিবিপ্রধান
গত ১১ মে বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে রওনা হন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ১২ মে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন (বাংলাদেশের খুলনাকে ভারতের নদীয়ার সঙ্গে সংযোগকারী) এবং বরানগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
১৩ মে দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ কলকাতার একটি হাসপাতালে নিউরোলজিস্টের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্টের নাম করে ক্যাবে করে বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। আনারকে বহনকারী ট্যাক্সির চালক কলকাতা পুলিশকে জানিয়েছেন, নিউ মার্কেট এলাকা থেকে আরেক বাংলাদেশিকে তুলে নিয়ে নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। মেডিকেলের অ্যাপয়েন্টমেন্ট যদি প্রথম স্থানে ছিল তবে সেখানে যায়নি।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, রাজারহাটের অভিজাত উন্নয়ন সংস্থা সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে আনার ছাড়াও দু'জন পুরুষ ও এক নারী ঢোকেন। পরের চারদিন ধরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বাকি তিনজন বিভিন্ন সময়ে ভবন থেকে বের হয়ে গেলেও এমপিকে আর দেখা যায়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে ঢোকার প্রথম দিনই তাকে হত্যা করা হয়। ওই অ্যাপার্টমেন্টের সেপটিক ট্যাংকে কিছু মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া গেলেও নিহত এমপি আনারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ডিএনএ মিলেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় ২২ মে নিহতের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হয়।
আরও পড়ুন: এমপি আনার হত্যার বিষয়ে মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে: ডিবিপ্রধান
ডিবিপ্রধান হারুন এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা এবং কেন ছিলেন তা নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে নানা তত্ত্ব দাঁড় করালেও এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের কোনো উত্তর সন্তোষজনকভাবে পাওয়া যায়নি।
হারুন শুরু থেকেই ঝিনাইদহে এমপির কৈশোরের বন্ধু ব্যবসায়ী মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীনের হাতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। যিনি একজন মার্কিন নাগরিক। কলকাতার যে ফ্ল্যাটে খুনের ঘটনা ঘটেছে, সেই ফ্ল্যাটটি তিনি এক ভারতীয় আইএএস কর্মকর্তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু যখন ঘটনা ঘটে সেসময় শাহীন নিজে কলকাতায় উপস্থিত ছিলেন না।
মতাদর্শগত পার্থক্য থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক বিরোধেরর সম্ভাব্য কারণও থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন ডিবিপ্রধান।
অতি সম্প্রতি এমপির মেয়ে বলেছেন, তার বাবার হত্যার পেছনের কারণটি শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ঝিনাইদহ শাখার কোন্দল।
আরও পড়ুন: এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৭ আসামিই গ্রেপ্তার: ডিবিপ্রধান