প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে রক্ষায় সবুজ পুনরুদ্ধারসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এই দেশগুলোকে বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোর উচিত সিভিএফ-ভি ২০ দেশেগুলোর সবুজ পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা দেয়া।
প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রথম ভি২০ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফাইন্যান্স সামিট-এ এই পাঁচ দফা প্রস্তাব দেন। বৃহস্পতিবার ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যকে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পাশে চায় ঢাকা
প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি দেশকে অবশ্যই বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রাখতে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ রোধে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য অনুসরণ করতে হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোর উচিত সিভিএফ-ভি ২০ দেশের সবুজ পুনরুদ্ধারের সুবিধার্থে মূলধন ব্যয় কমাতে এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ঐকান্তিকভাবে সমর্থন করা।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সমস্যা নিরসনে কমনওয়েলথের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, তহবিলের প্রবাহ অবশ্যই অনুমানযোগ্য, ভারসাম্যপূর্ণ, উদ্ভাবনী এবং বর্ধনশীল হতে হবে। উন্নয়নে অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর তহবিল বরাদ্দ ও বিতরণের একটি ব্যবহার-বান্ধব প্রক্রিয়া গ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন জলবায়ু তহবিলের মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় থাকতে হবে।
চতুর্থ প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় রক্ষায় বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে সিভিএফ-ভি ২০ দেশগুলোকে সহায়তা করতে হবে। সিভিএফ দেশগুলোর জন্য স্মার্ট বীমা প্রিমিয়াম ভর্তুকি এবং বীমাকৃত পণ্যগুলোকে মূলধনে রূপান্তরের জন্য আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন।
পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমাদের 'মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা'র মতো একটি 'জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা' গ্রহণের জন্য সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে পারে। আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করছি।
আরও পড়ুন: জলবায়ু অভিযোজন: ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিলের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, পৃথিবী ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। আমাদের অবশ্যই আমাদের কাজে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হতে হবে। আসুন আমরা একটি জলবায়ু সহনশীল বিশ্ব তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করি। তিনি জলবায়ু সমৃদ্ধির জন্য উদ্ভাবনী অর্থায়নের উৎস খুঁজতে অর্থমন্ত্রী, উন্নয়ন অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর প্রতি আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, মূলত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের কারণেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়মূলক প্রভাব বিশ্বজুড়ে প্রকটভাবে দৃশ্যমান। আমাদের এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই জলবায়ু বিপর্যয় ঠেকাতে হবে। সিভিএফের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সিভিএফ-ভি২০ গ্রুপের ৪৮ সদস্য রাষ্ট্রের মাধ্যমে বৈশ্বিক নিঃসরণের মাত্র ৫শতাংশ নির্গত হয়। কিন্তু এসব দেশের মানুষরাই মনুষ্যসৃষ্ট এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।