জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার রাতে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকসহ বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কাউন্সেলর ফাহমিদ ফারহান জানান, নিউইয়র্ক সময় রাত ১০টা ১০ মিনিটে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান অধ্যাপক ইউনূস। তাকে স্বাগত জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আবদুল মুহিত ও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সিডিএ সালাহউদ্দিন মাহমুদ।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে এটি অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এই প্রথম বিদেশ সফর।
আরও পড়ুন: সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করায় অধ্যাপক ইউনূসকে জাতিসংঘের শুভেচ্ছা
প্রধান উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সেখানে তার আবাসস্থল হায়াত গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল নিউইয়র্কে নিয়ে যাওয়া হয়।
২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ আলোচনায় ভাষণ দেবেন তিনি।
২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি
২৪ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ ও পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন।
প্রফেসর ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টেও যোগ দেবেন।
এছাড়াও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা 'মিট দ্য ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ' নামে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টেও যোগ দেবেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
ইতালির মন্ত্রী পরিষদের সভাপতি জর্জিয়া মেলোনি এবং কুয়েতের যুবরাজ শেখ সাবাহ খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে পৃথকভাবে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে পারেন।
আরও পড়ুন: ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নতুন অধ্যায়: নিউইয়র্কে বাইডেন-ইউনূস বৈঠক ২৪ সেপ্টেম্বর
এছাড়াও মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক করার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউইয়র্কে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউএনবিকে বলেন, এটি একান্ত বৈঠক হতে যাচ্ছে।
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ গত কয়েক দশকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেননি।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১১টায় কমপক্ষে ১৫ মিনিট সময়ের এই বৈঠকটি হতে পারে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করা স্বাভাবিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে এমন কোনো নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্ব এই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছে ঢাকা।
২৩-২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফর করছেন বাইডেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিউইয়র্ক সফর নিয়ে প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট বাইডেন আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি মোকাবিলা, বৈশ্বিক সমৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া এবং মানবাধিকার রক্ষায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান গঠন ও উন্নয়নে তাদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের রূপরেখা খুঁজছে, যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
তৌহিদ হোসেনের মতে, প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্কে চার দিন অবস্থানকালে নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএসএইড প্রশাসকসহ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সময়ে সভার অনেক সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে নেওয়া হয়। সেই বিবেচনায় নতুন সভা যুক্ত হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনো সভা বাদ পড়তে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের কোনো প্রতিনিধি দল চার্টার্ড ফ্লাইটে করে নিউইয়র্ক যাচ্ছে না। বরং নিজ নিজ দায়িত্ব অনুযায়ী যথাসম্ভব সীমিত পরিসরে প্রতিনিধি দল তৈরি করা হয়েছে। ইউএনজিএতে আলোচ্য বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা সরাসরি যুক্ত তারাই শুধুমাত্র প্রতিনিধি দলে আছেন।
আরও পড়ুন: ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ইউনূস
এবারের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- 'কাউকে পেছনে ফেলে নয়: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি, টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক মর্যাদার অগ্রগতিতে একসঙ্গে কাজ করা'।
প্রধান উপদেষ্টার ২৭ সেপ্টেম্বর ভাষণের আলোচ্য
অধ্যাপক ইউনূস ২৭ সেপ্টেম্বর তার ভাষণে গত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অকল্পনীয় গণঅভ্যুত্থান এবং আগামী দিনে জনমুখী, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে তার দৃঢ় প্রত্যয়ের বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় একই দিন রাতে ঢাকার উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগ করার কথা রয়েছে তার। ২৯ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ঢাকায় পা রাখবেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইউএনজির ৭৯তম অধিবেশন ড. ইউনূসের সরকারের জন্য বড় সুযোগ: কুগেলম্যান