জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিচারের অপেক্ষায় আছেন। তারা অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জোরপূর্বক গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের সংগঠন 'মায়ের কান্না' এর ব্যানারে সদস্যরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে স্মারকলিপি দেন।
বুধবার সকালে ঢাকার শাহীনবাগে গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের সংগঠন 'মায়ের ডাক'-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলামের বাসায় গেলে তারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রতি এ আহ্বান জানান।
সানজিদা বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন, যিনি ২০১৩ সালে বলপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কামরুজ্জামান লেনিনের স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে 'মায়ের কান্না' সংগনের সংগঠকরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের হস্তক্ষেপ কামনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বুদ্ধিজীবী দিবসে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বিতর্কিত করা হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
কামরুজ্জামান লেনিনের বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট সাইদুর রহমান, যিনি পরে বিমান বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এবং জেনারেল জিয়ার শাসনামলে ‘অন্যায্যভাবে’ তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে আবেদনে, ‘মায়ের কান্না’ আয়োজকরা লিখেছেন: ‘আমরা সুষ্ঠু বিচারের জন্য আপনার কাছে এসেছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, খুনি জিয়ার এই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শক্ত অবস্থান নেবে এবং বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি যে মার্কিন সরকার এই বিষয়গুলো অত্যন্ত মানবিকভাবে বিবেচনা করবে, একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করে এবং আইনের শাসন ও মানবাধিকার জোরদার করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বাধীন গবেষকদের মতে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া ক্ষমতা গ্রহণের পর তার আদেশে ১০০০ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
তারা জানান, জেনারেল জিয়ার শাসনামলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তাদের প্রিয়জনের দেহাবশেষ সম্পর্কে অনেকেই এখনও অবগত নন।
১৯৭৭ সালে ‘জাপানি রেড আর্মি কর্তৃক ঢাকায় একটি জাপানি বিমান ছিনতাই ও অবতরণ’- এর ঘটনার কথা উল্লেখ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ন্যায়বিচারের জন্য চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জেনারেল জিয়ার অনুগত বাহিনী’ ঢাকায় একটি অভ্যুত্থানের নামে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর শত শত অফিসারকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, জিয়া অন্যায়ভাবে প্রায় এক হাজার ১৫৬ জন সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
‘মায়ের কান্না’-এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাজধানীর শাহীনবাগ এলাকার একটি বাড়িতে গিয়েছিলেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় বসবাসকারী ভুক্তভোগী পরিবারগুলো উপস্থিত হয়ে রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আরও পড়ুন: মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মার্কিন রাষ্ট্রদূত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে স্মৃতিসৌধে যাননি, অন্য কোথাও গেছেন: কাদের