জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি বুধবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দশক জুড়ে দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। তবে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সেবা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় জোরদার করার মাধ্যমে আনুমানিক ৪৮ হাজার শিশুর মৃত্যু এড়ানো যেতে পারে।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, নিউমোনিয়া মোকাবিলায় প্রচেষ্টা জোরদার করা হলে তা এর বাইরে একটি ‘রিপল ইফেক্ট’ তৈরি করতে পারে, যা একই সাথে অন্যান্য বড় ধরনের শৈশবকালীন রোগে আরও ৯২ হাজার শিশুর মৃত্যু ঠেকাতে পারে।
বার্সেলোনায় ৯টি শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য ও শিশুদের সংস্থা শৈশবকালীন নিউমোনিয়া বিষয়ক প্রথম বৈশ্বিক ফোরাম আয়োজন করার মাঝে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
শিশুদের পুষ্টির উন্নতি, অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান ও টিকাদানের আওতা বাড়ানো এবং স্তন্যপানের হার বাড়ানো- এ পদক্ষেপগুলো নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এ হস্তক্ষেপগুলো ডায়রিয়া (২৫ হাজার), সেপসিস (৩ হাজার) ও হামের (৩৩ হাজার) মতো রোগে হাজারো শিশুর মৃত্যুও ঠেকাতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ এ প্রভাব এতো ব্যাপক হবে যে শুধুমাত্র নিউমোনিয়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে সব ধরনের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ লাখ ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যু এড়ানো যেতে পারে।
ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের কারণে নিউমোনিয়া হয় এবং এ রোগে আক্রান্ত হলে শিশুদের ফুসফুস পুঁজ ও তরলে ভরে যায়, যার কারণে তাদের নিঃশ্বাস নিতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। এ রোগটি দেশে শিশুদের অন্যতম বড় ঘাতক, যার কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৩ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টিকার মাধ্যমে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ এবং স্বল্প মূল্যের অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে সহজেই চিকিৎসা করা যেতে পারে। কিন্তু দেশে এক বছরের কম বয়সী অনেক শিশুকে টিকা দেয়া হয়নি এবং এ রোগের লক্ষণে ভোগা সত্ত্বেও অর্ধেকের বেশি সংখ্যক শিশু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পায় না।
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রধান নির্বাহী কেভিন ওয়াটকিন্স বলেন, ‘যে পরিমাণ জীবন বাঁচানো যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সম্ভাবনা তার চেয়ে অনেক বেশি। কেননা এ গবেষণায় অক্সিজেনের সহজলভ্যতা বা বায়ু দূষণ কমানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হয়নি, যে বিষয়গুলো নিউমোনিয়ার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত।’
‘এ ফলাফলগুলো কী সম্ভব তা দেখায়। টিকা, স্বল্প মূল্যের অ্যান্টিবায়োটিক ও নিয়মিত অক্সিজেন চিকিৎসার অভাবে লাখ লাখ শিশুকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে দেখা এবং তা চলতে দেয়া নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়,’ যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি টোমো হোযুমি জানান, সবচেয়ে দরিদ্র ও বঞ্চিত শিশুরাই নিউমোনিয়ায় মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে সব থেকে বেশি। ধনী পরিবারের শিশুদের তুলনায় দরিদ্র পরিবারের শিশুদের সেবা পাওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেক এবং তাদের পাঁচ বছরের জন্মদিনের আগেই মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও দ্বিগুণ।
‘নিউমোনিয়ার কারণে শিশু মৃত্যু বন্ধের সম্ভাবনার অগ্রগতি যথেষ্ট ত্বরান্বিত হয়নি বা ন্যায্য নয়। এর জন্য স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি এবং বায়ুদূষণসহ আন্তখাত সমন্বয়ে প্রকল্প প্রয়োজন। ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেন ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থা যৌথভাবে বাংলাদেশ সরকারকে নিউমোনিয়া মোকাবিলায় সহায়তা করে,’ বলেন তিনি।
৯ শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য ও শিশুদের সংগঠন- আইএসগ্লোবাল, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউনিসেফ, এভরি ব্রেথ কাউন্টস, লা কাইশা ফাউন্ডেশন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, ইউএসএইড, ইউনিটাইড ও ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স জিএভিআই যৌথভাবে ২৯-৩১ জানুয়ারি বার্সেলোনায় অনুষ্ঠেয় শৈশবকালীন নিউমোনিয়া বিষয়ক প্রথম বৈশ্বিক ফোরামে বিশ্ব নেতাদের আতিথেয়তা দিচ্ছে।