স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সরকারি হাসপাতালে ডায়াবেটিস রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। আগামীতে ইনসুলিনও ফ্রি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনসিডিসি) এবং বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি (বাডাস) কর্তৃক বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘ডায়াবেটিস চিকিৎসা: বর্তমান ও আগামীর ভাবনা’ বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘নন কমিউনিকেবল ডিজিসের কারণে দেশের কমপেক্ষ ৬১ ভাগ মানুষ কোনো না কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। নন কমিউনিকেবল অন্যান্য রোগের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগ অন্যতম। ডায়াবেটিস রোগটি নিরবে শরীরে চলে আসে। দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের পাশাপাশি শহরের মানুষজনও অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতনতা বা ডায়াবেটিস নিয়ে তেমন একটা সচেতন নয়।
জাহিদ মালেক বলেন, একটি জরিপ থেকে জানা গেছে, দেশের মাত্র ১২ ভাগ মানুষের ডায়াবেটিস এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আবার অনেক মানুষই চিকিৎসার টাকার অভাবে ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে যান না। এ বিষয়ে সবার জানা প্রয়োজন, শহর বা গ্রামের প্রতিটি হাসপাতাল থেকেই এখন বিনামূল্যে ডায়াবেটিস রোগের প্রায় সকল ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি খুব দ্রুতই ডায়াবেটিস রোগের জন্য ব্যয়বহুল চিকিৎসা সামগ্রী ইনসুলিনও বিনামূল্যে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকারের অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে পাওয়ার পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসাও মানুষ ঘরের পাশে থাকা যেকোনো হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিকেই পাবেন।
আরও পড়ুন: ভোটার আইডি কার্ড না থাকলেও টিকা নেয়া যাবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে। আর এই কৃতিত্ব দেশের সকল মানুষের। দেশের অনেক দেশই এখনও করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে হিমশিম খাচ্ছে। রাশিয়ায় দিনে হাজারও মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন অনেক নিরাপদ আছে। এর কারণ অনেক। হাসপাতালে সঠিকভাবে করোনার চিকিৎসা দেয়া, সরকারের অতি দ্রুত ভ্যাক্সিন ব্যবস্থা করা ও সেটি মানুষকে দেয়া অন্যতম। বিশ্ব থেকে ২১ কোটি ডোজ ভ্যাক্সিন কেনা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১১ কোটি ডোজ হাতে এসে পৌঁছেছে। এ মাসেই আরও প্রায় চার কোটি ডোজ চলে আসবে। প্রায় আট কোটি ডোজ ভ্যক্সিন মানুষকে দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ভ্যাক্সিন নিয়েছে। চার কোটি মানুষ ডাবল ডোজ ভ্যাক্সিন নিয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকেও নিয়িমিত ভ্যাক্সিন দেয়া হচ্ছে। ফাইজারের ভ্যাক্সিন ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে রাখতে হয়। এজন্য সব স্কুলে ফাইজার ভ্যাক্সিন রাখতে না পারায় কেন্দ্র সংখ্যা তাপমাত্রা কেন্দ্র সামনের মাসগুলিতে প্রতি মাসে তিন থেকে চার কোটি ডোজ ভ্যাক্সিন মানুষকে দেয়া হবে। এভাবে চললে আমরা দ্রুতই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারবো।
ঢাকার স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদান কেন্দ্র স্বল্পতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী টিকা নিতে পারছে না সভায় উপস্থিত সংবাদকর্মীদের এমন একটি প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা গতকালই আলোচনা করেছি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী খুব দ্রুততম সময়ে আমরাই নির্ধারিত স্কুলগুলিতে গিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের ভ্যাক্সিন দেবো।
আরও পড়ুন: ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন পেলেই ১২ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা শুরু: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির (বাডাস) সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। সভায় ডায়াবেটিস হলে তার জন্য করণীয়, চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস হওয়ার আগেই লাইফস্টাইল পরিবর্তনসহ জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধি করা নিয়ে সভায় উপস্থিত আরও যারা বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক এনায়েত হোসেন, সমকাল পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি, মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আহমেদুল কবীর, এনসিডিসি এর লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর রোবেদ আমীন, বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির মহাসচিব সায়েফ উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ফয়েজ উদ্দিনসহ অন্যান্য চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: এ মাসেই তিন কোটি ডোজ টিকা দেয়া যাবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী