অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় নিম্ন আদালতে চার বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক সেনাপ্রধান ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট হারুন-অর-রশীদের জামিনের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে হারুনের করা আপিল এক বছর পর শুনানির জন্য ধার্য করেছেন আদালত।
এদিকে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন শুনে রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে হারুন-অর-রশীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রবিউল আলম বুদু ও অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান শাহীন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
আরও পড়ুন: ডেসটিনি পরিচালনায় বোর্ড গঠন করে দিলেন হাইকোর্ট
এর আগে গত বছরের ৩০ আগস্ট এ মামলায় নিম্ন আদালতে হারুন-অর-রশিদকে ছয় মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সাজার বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য তিন মাসের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেন আদালত। পরে আপিল বিভাগও তার জামিন বহাল রাখেন।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা ওই মামলায় গত বছরের ১২ মে রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক।
রায়ে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন ও কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশিদসহ ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড দেয়া হয়। ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের’ কথা বিবেচনায় নিয়ে আদালত হারুন-অর-রশিদকে সাজা কমিয়ে চার বছরের দণ্ডদেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই রায়ে ৪৬ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করেন।
এই সাজা থেকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন সাবেক এই সেনা প্রধান। একই সঙ্গে তিনি জামিনের আবেদনও জানান।
গত বছরের ৯ জুন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ সাবেক সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট হারুন-অর-রশিদের জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। একইসঙ্গে নিম্ন আদালত থেকে তার মামলার নথি তলব করেন।
পরে গত বছরের ২৯ জুন ৪ বছরের হারুন-অর-রশিদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই বছরের ৩০ আগস্ট হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। রবিবার ওই জামিনের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুলসহ ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়।
রাজধানীর কলাবাগান থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুই মামলায় মোট চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৪ মে উভয় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আর ট্রি প্ল্যান্টেশনের মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। দুই মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫৩। রফিকুলসহ ১২ জনের নাম দুটি মামলাতেই রয়েছে।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাত ও পাচারের মামলাটির বিচার শেষ হলও ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলাটি এখনও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।