কানাডার অন্টারিওতে বসবাসকারী নিহত বাংলাদেশি শরীফ রহমানের স্ত্রী শায়লা নাসরিন বলেছেন, তার স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন হয়ে গেছে। তিনি মেনে নিতে পারেছন না যে কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পর তার স্বামীর দরজার তালা খোলার পরিচিত শব্দ তিনি আর কোনোদিন শুনতে পাবেন না।
নিহত শরীফ রহমান (৪৪) স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁর মালিক এবং কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ছিলেন।
সিবিসি কানাডার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাকে ও তার মেয়েকে দুর্ভাগ্যবশত তার স্বামীকে ছাড়াই বাকি জীবন কাটাতে হবে।
নাসরিন বলেন, ‘ঘরের প্রতিটি কোণে আমি তাকে অনুভব করতে পারি।’
শরীফ অন্টারিওর লন্ডন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ২৪ আগস্ট মারা যান।
ওয়েন সাউন্ড পুলিশ জানিয়েছে, শরীফের রেস্তোরাঁয় বাকি থাকা বিল নিয়ে তর্কের সময় ১৭ আগস্ট তিনজন তার উপর হামলা চালায়।
রবিবার তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
পুলিশ এখনও তার হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন তিন ব্যক্তিকে খুঁজছে।
নাসরিন বলেন, ‘তারা একটি সুন্দর পরিবারকে ধ্বংস করেছে।’
পরিবারটি প্রায় ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় চলে আসে। তারা কয়েক বছর পরে ওয়েন সাউন্ডে বসবাস শুরু করে।
আরও পড়ুন: সৌদি আরেব ওমরাহ করে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় প্রবাসীর মৃত্যু
সিবিসি কানাডার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রহমান সেখানে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
নাসরিন বলেন, ‘সে সবসময় রেস্তোরাঁয় তার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সে শুধু আমাকে এবং আমাদের মেয়েকেই ভালোবাসত না, সে ভালোবাসা ও আবেগ দিয়ে রান্নাও করত।’
তার স্ত্রী আরও বলেন, শরীফ খুব কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। সে কমিউনিটি নিয়ে খুব ভাবত, অভাবীদের সহায়তা করত এবং ক্ষুধার্তদের খাওয়াতে পছন্দ করত।
রবিবার, শত শত লোক শরীফের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে ওয়েন সাউন্ডের রাস্তায় সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
নাসরিন বলেন, ‘আমি শুধু মুসলিম কমিউনিটি নয়, সব কমিউনিটির সমর্থন পাচ্ছি। এটা আশ্চর্যজনক।’
শরীফের হামলার পরের দিনগুলোতে এবং তার মৃত্যুর পর মানুষ তার দোকানের সামনে ফুল ও নোট রেখে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার পর থেকে মানুষ সামাজিক মাধ্যমে তাদের ভালোবাসা ও সমবেদনা জানাচ্ছে।
নাসরিন বলেন, ‘আপনারা কল্পনা করতে পারেন তিনি সমাজের প্রতি কতটা নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। এজন্যই তিনি মানুষের কাছ থেকে এত ভালোবাসা পেয়েছেন।’
ওয়েন সাউন্ড মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিকান্দার উমান বলেন, সংহতির বহিঃপ্রকাশ অতুলনীয়।
কানাডিয়ান পুলিশ শরীফের মৃত্যুর বিষয়ে তাদের তদন্তের বিষয়ে কোনো আপডেট দেয়নি।
সিবিসি কানাডার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছেতবে পুলিশ এখনও তিনজন সন্দেহভাজনকে খুঁজছে। যাদের মধ্যে দুজনের বয়স ২০-৩০ এর মধ্যে এবং অন্যজনের বয়স ৪০-৫০ এর মধ্যে।