সরকারি চাকরিতে দুর্নীতি রোধে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, বদলি, বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসরের মতো পদক্ষেপগুলো অপর্যাপ্ত প্রতিবন্ধক এবং অজান্তেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি লালন করতে পারে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রশাসনিক পদক্ষেপের পরিবর্তে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও পুলিশের মতো সংস্থায় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বদলি বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বদলি বা অবসরের মতো প্রশাসনিক পদক্ষেপ আশাব্যঞ্জক মনে হলেও তাতে দুর্নীতির মূল কারণগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের পদক্ষেপ এমন একটি চক্রকে স্থায়ী করতে পারে, যেখানে কঠোর আইনি পরিণতির অভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে না।’
তিনি সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার সংশোধনী তুলে ধরে বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: সাবেক আইজিপি বেনজীরের ব্যাপক দুর্নীতির জবাবদিহিতা দাবি করেছে টিআইবি
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের আইনি ফাঁকফোকরগুলো আইনের দৃষ্টিতে সমতার সাংবিধানিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগে ন্যূনতম শাস্তির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা একটি ক্ষতিকর বার্তা দেয়।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এটি ইঙ্গিত দেয় যে কিছু ব্যক্তি আইনের ঊর্ধ্বে, যা জনগণের আস্থা কমায় এবং নৈতিক শাসনের ভিত্তিকে নষ্ট করে।’
দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রাতিষ্ঠানিক আঁতাতসহ দুর্নীতির বিকাশ ঘটায় এমন পদ্ধতিগত বিষয়গুলোর দায়িত্ব নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
টিআইব প্রধান বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা জবাবদিহিতা এড়িয়ে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কার্যকরভাবে রোধ করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নৈতিক মান বজায় রাখতে, আমাদের এমন দৃঢ় পদক্ষেপ দরকার যা স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রতি সত্যিকারের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিরোধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন, যা অপরাধের তীব্রতাকে প্রতিফলিত করে। যাতে এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে অসদাচরণ রোধ করা যায়।
আরও পড়ুন: কালো টাকা সাদা করার বাজেট প্রণয়ন অসাংবিধানিক ও দুর্নীতিবান্ধব: টিআইবি