দেশে গুম এবং গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের স্বাধীনতার ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই বলে সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেটকে জানিয়েছে বাংলাদেশ।
রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ব্যাচলেটের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুমের বিষয়টি উত্থাপন করেননি। তবে বাংলাদেশ পক্ষ তা নিজ থেকে উত্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, ‘তারা (জাতিসংঘ পক্ষ) বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তোলেনি। কিছু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের অবহিত করা হয়। আমরা বলেছি এ রকম কোনো তথ্য থাকলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করব।’
সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো ঘটনার কথা শোনেননি বলে জানান মোমেন। তবে ২০০২-২০০৩ সালে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেননি: আইনমন্ত্রী
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানের কাছে নেত্র নিউজের (ইংরেজি) সম্পাদক ডেভিড বার্গম্যানের খোলা চিঠির বিষয়ে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে- এ জন্য তারা (বার্গম্যান ও অন্যরা) খুবই অসন্তুষ্ট ও এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘কিছু লোক তাদের (বার্গম্যান ও অন্যদের) টাকা দিচ্ছে। তারা পেইড ব্যক্তি।’
যারা তাদের (বার্গম্যান ও অন্যরা) পয়সা দেয় তাদের পক্ষে কাজ করে- এমন শুনেছেন বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় বার্গম্যানের ভূমিকার কথা স্মরণ করে মোমেন বলেন, তিনি তখন অর্থের বিনিময়ে কাজ করতেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানকে আরও বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধের ধারণাটি সত্য নয়। ‘আমি দেখছি এখানে মিডিয়া খুব শক্তিশালী।’
এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা (জাতিসংঘের পক্ষ) খুবই উদ্বিগ্ন।
ব্যাচলেট রোহিঙ্গাদের প্রতি উদারতার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। তবে একই সঙ্গে তারা রোহিঙ্গাদের প্রতি আরও বেশি সহযোগিতা চান, বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঢাকায় পৌঁছেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট
দেশে মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে ব্যাচলেটকে অবহিত করেন মোমেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাখাইন রাজ্যে তাদের সহায়তা বাড়াতে তাকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পক্ষ।
এর আগে রবিবার সকালে চারদিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যাচলেটকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেছেন, ব্যাচলেট সকাল ৯টায় পৌঁছানোর কথা ছিল, কিন্তু ফ্লাইটটি বিলম্বিত হয়।
ব্যাচলেট দুই দফায় (২০০৬-২০১০ ও ২০১৪-২০১৮) চিলির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দেখা করার কথা রয়েছে।
রবিবার ব্যাচলেট পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ছাড়াও সরকারের মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, যুব প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
তিনি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।