বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে অস্ট্রেলিয়া ‘উদ্যমীভাবে কাজ করতে চায়’ উল্লেখ করে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার বলেছেন, বৃহত্তর ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশের ‘সোনালী’ সুযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাঠামোগত সমঝোতার (টিফা) প্রস্তাবিত সুযোগগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের ভবিষ্যত সম্পর্কে আমার পূর্বাভাস জিজ্ঞাসা করেন-আমি আবারও বলি, ভবিষ্যতটি হবে সোনালী সময়।’

হাইকমিশনার অবশ্য বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেগুলোকেও মোকাবিলা করা দরকার বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সেই সোনালী ভবিষ্যতের সুবিধা নিয়ে একসাথে এমনভাবে কাজ করা দরকার যা এই চ্যালেঞ্জগুলোকে ‘গঠনমূলকভাবে’ মোকাবিলা এবং দেশগুলোর কল্যাণে সহায়তা করে।

‘বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার তার মূল বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।

শনিবার কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত অ্যাম্বাসেডর লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে এ সংলাপের আয়োজন করে।

কসমস ফাউন্ডেশন অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে অ্যাম্বাসেডর লেকচার সিরিজের আয়োজন করে আসছে। 

সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

আরও পড়ুন: বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টিফা চুক্তি স্বাক্ষর

আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান এবং কসমস ফাউন্ডেশনের সম্মানিত উপদেষ্টা ইমেরিটাস ড. তারিক এ করিম।

এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের মধ্যকার টিফা চুক্তি স্বাক্ষর সময়োপযোগী ছিল। এটি দু’দেশকে আরও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকে প্রয়োজনীয় উৎসাহ দিতে কাজ করবে।

খান বলেন, যদিও টিফাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতীকী হিসাবে দেখা হয়, তারপরও এটি প্রতিশ্রুতি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার একটি ইঙ্গিত দেয়, যা আসলে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্কের পরবর্তী পর্যায়ে প্রয়োজন। সুতরাং বলতে পারি, আমরা সঠিক পথেই আছি।’

তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে ভারত এই অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান অংশীদার কিন্তু অস্ট্রেলিয়া শুধুমাত্র ভারতীয় দৃষ্টিতে দক্ষিণ এশিয়াকে দেখে না। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা চিরন্তন। আমি আশা করি টিফা চুক্তি বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করবে।’

বাংলাদেশের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার অভূতপূর্ব সহযোগিতার কথা তুলে ধরে ড. ইফতেখার চৌধুরী বলেন, টিফা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগ ও বাণিজ্য আরও বহুগুনে বাড়বে।

তিনি বলেন, ই-কমার্স, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি, স্যানিটেশন এবং আমাদের সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগাতে বর্ধিত সহযোগিতার সন্ধান করছি। 

পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় বাজারে প্রবেশাধিকার গুরুত্বপূর্ণ।

ড. ইফতেখার বলেন, ‘যেহেতু অস্ট্রেলিয়া আমাদের উন্নয়ন অভিযোজন এবং পররাষ্ট্র নীতির প্রয়োজনীয়তা বোঝে তাই আমি আশাবাদী।’

আরও পড়ুন: কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

হাইকমিশনার ব্রুয়ার বলেন, সঠিক অবস্থার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে সুযোগ খুঁজতে আগ্রহী হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি উভয় দিকেই বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী। আমি দেখতে পাচ্ছি যে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ, ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং আশা করি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ বাড়াতে আমরা কী করতে পারি তা দেখার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে টিকফা ব্যবহার করতে সক্ষম হব।

অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ গভীর ও প্রসারিত করার বিষয়ে একটি যৌথ স্বার্থ রয়েছে এবং আমি মনে করি এটি করার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

সুষম আমদানি ও রপ্তানির সঙ্গে পোশাক খাত, কৃষি, খাদ্য ও পানীয় এবং শিক্ষা সেবা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।

হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ দক্ষতা উন্নয়ন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর আরও সুযোগ দেখছি।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে টিফার অধীনে বেসরকারি খাতের পুনরুদ্ধার এবং বৃদ্ধির নেতৃত্ব দেয়ার জন্য সরকার কীভাবে একসাথে কাজ করতে পারে তা অন্বেষণ করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ এলএনজি এবং অন্যান্য জ্বালানি সম্পদের প্রধান সরবরাহকারী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার।

আরও পড়ুন: কালিদাস কর্মকারের স্মরণে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আয়োজন