দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর্যাপ্ত নীতি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রেকর্ড করা এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণের জন্য উভয় দেশ থেকে পর্যাপ্ত নীতি সহায়তা প্রদান করা জরুরি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে শিল্প কাঁচামাল ও ভোক্তাসামগ্রী যেমন তুলা, সয়াবিন ও গম রপ্তানি করতে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো শুল্ক দিতে হয় না।
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করুন: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে আমেরিকাকে শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশটি (মার্কিন) আমাদের রপ্তানির বৃহত্তম গন্তব্য, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বৃহত্তম উত্স, দীর্ঘকালীন উন্নয়নের অংশীদার এবং প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্স।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি সহায়তার উপর বাংলাদেশের নির্ভরতা অনেক কমলেও লাখ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন বেড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দ্রুত সম্প্রসারণশীল দেশীয় বাজার এবং ৪ বিলিয়ন লোকের বিশাল আঞ্চলিক বাজারের সাথে ক্রমবর্ধমান সংযোগই মার্কিন ব্যবসায় ও বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধার্থে আমরা আমাদের ভৌত, আইনি এবং আর্থিক অবকাঠামোগত উন্নতি করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দ্রুত শিল্পায়নের জন্য সারা দেশ জুড়ে ১০০টি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করছে।
‘আমরা আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য উত্পাদন সুবিধার জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করে দিচ্ছি,’ বলেন তিনি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১’ এর অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়াতে ‘প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম’ আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ৬০টিরও বেশি দেশে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আইসিটি পণ্য রপ্তানি করে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ রপ্তানির গন্তব্য।
তিনি উল্লেখ করেন যে ইউএসএআইডি'র বাংলাদেশের জন্য বিস্তৃত বেসরকারি খাত মূল্যায়ন ২০১৯ প্রতিবেদন অনুসারে, আইসিটি শিল্প ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘বাংলাদেশ এখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আইসিটি শিল্পের জন্য ২৮টি হাই-টেক পার্ক তৈরি করছে। আমরা মার্কিন কোম্পানিগুলোকে আইসিটি খাতে বিনিয়োগের জন্য হাই-টেক পার্কের প্রস্তাব রাখছি।’
আরও পড়ুন: করোনার নতুন ধাক্কা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ছাইয়ের উপরে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
‘আমরা জাতির পিতার দারিদ্র্য, শোষণ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য তার অসমাপ্ত কাজটি হাতে নিয়েছি। গত এক দশকে, আমরা আর্থ-সামাজিক সূচকগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কারণ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্দান্ত স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। বাংলাদেশ এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।