খালার বিয়ে উপলক্ষ্যে নতুন জামা কেনার টাকা যোগাড় করতে চার বছরের শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। ভারতীয় টিভি চ্যানেলের ক্রাইম পেট্রোল অনুষ্ঠান দেখে কৌশল রপ্ত করে তাকে অপহরণ করা হয়। বগুড়ার গাবতলীতে সানজিদা খাতুন (৪) নামে এক কন্যাশিশুকে হত্যার এই ঘটনায় বুধবার নবম শ্রেণির দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী রিয়াদের (১৫) দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ ওইদিন রাতে সানজিদার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে।
নিহত সানজিদা গাবতলী উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রী শাহীন প্রামাণিকের মেয়ে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই কিশোরও একই এলাকার বাসিন্দা। তারা হলো লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামের প্রবাসী উজ্জ্বলের ছেলে রিয়াদ ও সাজু প্রামাণিকের ছেলে শুভ।
আরও পড়ুন: প্রভাষক মামুন হত্যা: ৮ বছর পর জামায়াত নেতা গ্রেপ্তার
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর দুই কিশোর শিশু সানজিদাকে অপহরণ এবং হত্যার কথা স্বীকার করেছে। ময়না তদন্তের জন্য সানজিদার লাশ বৃহস্পতিবার বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শুভ জানিয়েছে, তার খালার বিয়ে উপলক্ষ্যে নতুন জামা-কাপড় কেনার টাকার জন্য তারা সানজিদাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। তারা ভারতীয় টিভি চ্যানেলের ক্রাইম পেট্রোল অনুষ্ঠান দেখে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণের কৌশল রপ্ত করে।
পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, চার বছর বয়সী সানজিদা বুধবার সকালে বাড়ির উঠানে খেলছিল। কিন্তু সকাল ১০টার পর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান না পাওয়ায় অনেকে ধারণা করেন পুকুর বা ডোবার পানিতে সে তলিয়ে গেছে। এজন্য ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাড়ি সংলগ্ন পুকুর ও ডোবায় তল্লাশী চালিয়ে না পেয়ে ফিরে যায়। এরপর ওইদিন দুপুরে একটি মোবাইল ফোন থেকে স্থানীয় এক মহিলার মোবাইল ফোনে কল করে সানজিদাকে অপহরণের কথা জানানো হয়। তাকে পেতে হলে মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। ওই মহিলা বিষয়টি নিখোঁজ সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিককে জানায়। এরপর সানজিদার বাবা সেই মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তার কাছেও অপহৃত মেয়েকে ফিরে পেতে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়। তবে কয়েকবার কথা বলার পর অপহরণকারীরা টাকার অংক কমিয়ে ৫০ হাজার দাবি করে এবং বুধবার রাত ৭টার দিকে গ্রামের একটি কালভার্টের নিচে রেখে আসতে বলে পাশাপাশি বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর জন্যও হুশিয়ার করা হয়। এরপর সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক পুরো ঘটনাটি গাবতলী থানায় জানালে পুলিশ নির্ধারিত সময়ের আগেই সেই কালভার্টের অদূরে ওঁৎ পেতে থাকে। এরপর রাত ৭টার দিকে এক ব্যক্তিকে ওই কালভার্টের কাছে আলো দিয়ে কিছু খুঁজতে দেখে পুলিশ ও সানজিদার স্বজনরা সেখানে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে। পরে তার মুখ দেখে চিনতে পারে সে একই গ্রামের প্রবাসী উজ্জ্বলের ছেলে রিয়াদ। তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ রাত ১১টার দিকে একই গ্রামে সাজুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি স্টিলের বাক্সের ভেতর থেকে সানজিদার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে। পরে ওই রাতেই পাশের কদমতলী গ্রামে নানার বাড়ি থেকে পুলিশ রিয়াদের সহযোগী শুভকেও গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন: বলাৎকারে বাধা দেয়ায় হত্যা করা হয় শিশু তামিমকে
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল জানান, রিয়াদ নিজেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দাবি করেছে। আর শুভ বলেছে সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বলেন,ওই হত্যার ঘটনায় নিহত সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গাবতলী থানায় একটি মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।