দুই দশক বিদেশে পালিয়ে থাকা নারায়ণগঞ্জের সাজাপ্রাপ্ত আসামি জাকির খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল জব্দ করার দাবি করেছে র্যাব-১১। রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার দুপুরে র্যাব-১১ এর কার্যালয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে নারায়ণগঞ্জে এক সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী, একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী আন্ডার ওয়ার্ল্ডের গডফাদার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচিত নাম ছিল জাকির খান। যার নামে চারটি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে তিনি এসকল মামলায় জেল খেটেছেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী ও মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে দেওভোগ এলাকার অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরের ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের পর তিনি দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। এ সময়ে বিভিন্ন মামলায় বিজ্ঞ আদালতে জাকির খান দোষী সাব্যস্ত হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে সাজা প্রদান করেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা: যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলাউদ্দিন কারাগারে
র্যাব আরও জানায়, এরপর থেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে জাকির খান দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। দীর্ঘদিনের পলাতক এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে র্যাব-১১ এর ধারাবাহিক কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় জাকির খানের বিষয়ে র্যাব-১১ খোঁজ-খবর শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে র্যাব-১১ এর নারায়ণগঞ্জের একটি বিশেষ অভিযানে ঢাকার ভাটারা থানার বসুন্ধরা এলাকা থেকে একটি বিদেশি পিস্তলসহ জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জাকির খানের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন বিশেষ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলায় আসামি জাকির খানের ১৭ বছরের সাজা হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে তার সাজা কমে আটবছর হলেও তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ-বিদেশে প্রায় ২১ বছর পলাতক ছিলেন। মূলত ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যা মামলায় আসামি হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন থাইল্যান্ডে আত্মগোপনে ছিলেন এবং সম্প্রতি ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর থেকে পরিচয় গোপন করে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্বপরিবারে বসবাস করছিলেন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির মৃত্যু
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার জাকির খানের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেএমইএর সহসভাপতি সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি জাকির খান। ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফর জামান বাবর নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় জেলা পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে এসে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এরপরই নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ঢাকার সেগুনবাগিচায় তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরীর বাসভবনে আশ্রয় নেয় জাকির খান। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর মন্ত্রীর সহায়তায় থাইল্যান্ডে পালিয়ে যায় সে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ইয়াবার প্রথম মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার