দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়া সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী মো. বুলবুল আহমদের বুকে, পাঁজরে, পিঠে তিনটি মারাত্মক ছুরিকাঘাত এবং হাতে আরেকটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বুলবুল আহমদের বুকে, পাঁজরে ও পিঠে তিনটি মারাত্মক ছুরির আঘাত এবং হাতে আরেকটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ছুরিকাঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।’
এদিকে নিহত হওয়া শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদের সঙ্গে থাকা মেয়ে বন্ধুকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় প্রধান ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট মেয়েটির সার্বক্ষণিক নজর রাখছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের নিজের কক্ষেই মেয়েটি অবস্থান করছেন। গত বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধান ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট মেয়েটির সঙ্গে স্বাভাবিক সময় কাটানোর চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও মেয়েটির সঙ্গে থাকা সহপাঠীদেরও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুৃন: শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আটক ৩
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ফারজানা সিদ্দিকা বলেন, ছুরিকাঘাতে নিহত শিক্ষার্থী বুলবুলের ঘটনাটি আমাদের সবার জন্য হৃদয়বিদারক। এই ঘটনায় পাশে থাকা তার মেয়ে বন্ধু একধরনের মানসিক ট্রমায় ভুগছে। আমরা চাইছি মেয়েটিকে স্বাভাবিক একটি নিয়মে ফেরাতে। এছাড়াও মেয়েটির সঙ্গে থাকা সহপাঠীদের মাঝেও যে একটি ভয় কাজ করছে তা দূর করতে আমরা সর্বত্র কাজ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ফজিলাতুন্নেছা শাপলা জানান, মেয়েটি প্রথম বর্ষের। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই এমন একটি ধাক্কা মেয়েটির জন্য বড়ই দুঃখজনক। সরেজমিনে তার নজর রাখছি। এই ধাক্কা কাটিয়ে মেয়েটি যেনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে সেজন্য বাড়তি নজর সবসময় থাকবে।
ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন বলেন, আমরা প্রথম থেকেই মেয়েটির সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। মেয়েটিকে কোনো ধরনের মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। নিজের চোখের সামনে এমন একটি দুর্ঘটনা যে কারও মানসিকভাবে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। মেয়েটির ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। মেয়ে ও নিহত শিক্ষার্থী বুলবুল দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অপরাধে জড়িতদের দ্রুত ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তথ্য সংগ্রহের জন্য মেয়েটির সঙ্গে সবসময় কোমল আচরণ করেছেন।
এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ আসামি গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ছিনতাই করতেই খুন করা হয় শাবি শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদকে। এ ঘটনার সঙ্গে আর কোনো ঘটনার সম্পৃক্ততা নেই।
ঘটনার পর বুলবুলের সঙ্গে থাকা মেয়ে বন্ধুর হাসপাতাল ত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই ছাত্রী তাদের জানিয়েছেন, বুলবুলের লাশ ক্যাম্পাসে নেয়া হবে। শেষ দেখার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। এর পেছনে অপরাধমূলক কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তাঁর কললিস্ট চেক করে গ্রেপ্তারদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুৃন: শাবি শিক্ষার্থী বুলবুল হত্যায় ৩ জনের সম্পৃক্ততা মিলেছে: পুলিশ