সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ মামলার ১৬ আসামিকে প্রিজনভ্যানে করে আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয়। ভ্যান থেকে নামার সময় অধিকাংশকে বেশ হাসিখুশি দেখা যায়। অধ্যক্ষ সিরাজ সবাইকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান ও ন্যায়বিচারের আশা করেন। রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত তারা ছিলেন খোশমেজাজে।
তবে আদালতের রায় শুনে কাঁদতে শুরু করেন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজসহ প্রায় সব আসামি। রায়ের পর যখন তাদের ভ্যানে তোলা হয় তখনও তারা কাঁদছিলেন।
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ।
রায় ঘোষণার সময় প্রত্যেক আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। তারা উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তারা নির্দোষ, তাদের ফাঁসানো হয়েছে, তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। নুসরাত আত্মহত্যা করেছেন।
আসামিদের মধ্যে কামরুন নাহার মনি ২৮ সেপ্টেম্বর কারাগারে সন্তান প্রসব করেন। নবজাতকসহ তাকে আদালতে হাজির থাকতে দেখা যায়।
রায়ের খবর জানাজানি হলে আদালত চত্বরে উপস্থিত আসামিদের স্বজনরা আহাজারি করতে থাকেন। এ সময় অনেকে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে আসামিদের নির্দোষ দাবি করেন। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
আদালত প্রাঙ্গণে আসামি হাফেজ আবদুল কাদেরের বাবা আবুল কাশেম খান, জাবেদ হোসেনের ভাই জাহেদ হোসেন, নুর উদ্দিনের মা রাহেলা বেগম, আবদুর রহিম শরীফের মা নুর নাহার ও ইফতেখার উদ্দিন রানার বাবা জামাল উদ্দিন দাবি করেন, নুসরাত হত্যা মামলাটি মিথ্যা এবং তাদের সন্তানদের বিনা দোষে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, নুসরাত নিজ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এতে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করা হলে নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়।
৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে মাদরাসায় যান নুসরাত। এ সময় তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল মামলা করেন। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।