পদ্মা সেতুর স্প্যানে ফেরি 'বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর' এর ধাক্কা দেয়ার ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্র দেখছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি- আজকের ঘটনার মধ্যে আমি গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আমি বলেছি, সিনিয়র মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও আজকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা গভীরভাবে তদন্ত করতে হবে এবং এটা অবশ্যই উদঘাটন করতে হবে।’
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুতে আঘাত লাগলে দেশের মানুষের হৃদয়ে আঘাত লাগে: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, কারণ এত সকাল বেলা এই ঘটনা আমরা দেখলাম, জাহাজ গেল, আবার ওখানে গিয়ে কোন চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ভিডিওতে দেখছি (মাস্তুল) বারি খেয়ে পড়ে গেল। বলা হচ্ছে ওটা লোহার, লোহার হলে তো পড়ে যাবে না, বেঁকে যাবে এবং ঘঁষা খাবে। কিন্তু ঘঁষার কোন চিহ্ন নেই। এই সংবাদগুলো কেন আসছে, এটাও একটা তদন্ত হওয়া দরকার। আমরা কথা ভুল হলে বা এটার মধ্যে কোন ষড়যন্ত্র না থাকলে আমি খুশি হবো ।
পদ্মা সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী স্প্যানে কোন নৌযানের ধাক্কা লাগার কথা নয়- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এটা তো আমাদেরও প্রশ্ন। পদ্মা সেতুর যে নকশা করা হয়েছে, সেই নকশা অনুযায়ী যে উচ্চতা থাকার কথা, সেখানে কোনভাবেই উপরের স্প্যানে আঘাত লাগার কথা নয়। আজকে এটা হয়েছে, কেন হয়েছে? আমরা বলেছি, এটার নিবিড় তদন্ত করতে হবে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত...এই ঘটনার পেছনে অন্য কিছু উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।’
আরও পড়ুন: জাতি হিসেবে মর্যাদার জায়গায় গিয়েছি: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘আমরা এত সতর্ক? পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার জন্য সেখানে ১৩ দিন ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এজন্য মানুষের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আমাদের অপরাধী ভাবছি। এখন তো মনে হচ্ছে এটা পদ্মা সেতুর আঘাত না, আঘাত আমাদেরকেই করা হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, তিনি তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা চাই এটার সঠিক তদন্ত হোক। অপরাধী যেই হোক, যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত সেগুলো তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসুক। যদিও পদ্মা সেতুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সেখানে স্প্যানের মধ্যে তারা কোন ধরণের আঘাতের চিহ্ন পাননি। আমরা ভিডিওতে দেখলাম সেখানে ধাক্কা লেগেছে। তারা স্থান পরিদর্শন করে দেখেছেন কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। এগুলো তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।’
এর আগের পদ্মা সেতুতে আঘাতের ঘটনায় তদন্তে কী বের হয়েছিল- জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘মাস্টার-সুকানিসহ অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের মেডিকেল পরীক্ষাও করা হয়েছে। স্বাস্থ্যগত কোন ধরণের ত্রুটি পাওয়া যায়নি। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে যে ধরণের (নাশকতা) কথা বলছি, সেই ধরণের কোন বিষয়ও উদযাটন করা যায়নি। তাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য পাওয়া যায়নি। সেগুলো দুর্ঘটনাই ছিল। আমি বলেছিলাম, উদাসিনতা ও দুর্বলতা আছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
আরও পড়ুন: এবার পদ্মা সেতুর স্প্যানে ফেরির ধাক্কা
পদ্মার পানির সমতল থেকে সেতু পর্যন্ত ১৮ মিটার উচ্চতা রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, পয়েন্ট ৫ মিটার অতিরিক্ত উচ্চতা রেখেছিল। পদ্মা সেতু যেভাবে তৈরি করা হয়েছে এই ধরণের ধাক্কা দিয়ে পদ্মা সেতুর কোন ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে আমাদের মনের। আজকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিশ্বাসঘাতকতার জায়গায় চলে গেছে। এটা কেন বলতেছে, এটা তাদের অনুভূতির জায়গায় চলে গেছে। এটাই হচ্ছে আমাদের বড় কষ্ট।
ঘাট স্থানান্তরের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর মাঝিরকান্দি ঘাট বিকল্প হতে পারে। এসব ঘটনার পর আমাদের মাস্টারদের মধ্যেও ভীতি তৈরি হয়েছে। আবার যদি কোন ঘটনা ঘটে যায় কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। সেজন্য আমরা মাঝিরকান্দি ঘাট প্রস্তুত রেখেছি। সেখানে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। নাব্যতা ও রাস্তার বিষয়টি ক্লিয়ার হলে হয়তো আমরা হালকা যানবাহন আপাতত পারাপার করতে পারব। কারণ এখানে ইয়ার্ড করার কোন সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ একটা জায়গা দেবে ইয়ার্ড করার জন্য।