২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৪ মে পর্যন্ত সকল পরীক্ষা স্থগিত রাখার নির্দেশনা জারি করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
সরকার আগামী ১৭ মে পুনরায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়া এবং ২৪ মে থেকে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ শুরু করে এবং দুপুর ১টায় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের ভিত্তিতে আগামী রবিবার পর্যন্ত বিক্ষোভ স্থগিত করে।
বিক্ষোভে বক্তব্য দিতে গিয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী তমালিকা হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের পরীক্ষা স্থগিত করেছে। আমাদের হলগুলো আবারও চালু না করা হলেও আমরা পরীক্ষা চালিয়ে যেতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ তাদের দাবি আদায় করতে সফল হয়েছে। আমাদের ক্যাম্পাসেও পরীক্ষা নেয়া সম্ভব।’
‘পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণার পর আমাদের মধ্যে অনেকে ক্যাম্পাসের বাইরে মেস ভাড়া নিয়েছে। পরীক্ষা শুরুর পর আমরা কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েছি। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ আমাদের পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর আগে সংশ্লিষ্টদের ২ জানুয়ারি থেকে পরীক্ষা দেয়ার নির্দেশ দেয়। অনেক বিভাগ অনার্স ফাইনাল এবং মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া শুরু করে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে দ্রুত পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা।
দুপুর ১টার দিকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘ ১১ মাস তারা শিক্ষা-কার্যক্রম থেকে দূরে। এতে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। জানুয়ারি থেকে তাদের পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও হঠাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান সকল পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি তারা সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরীক্ষা স্থগিত করেছে। কিন্তু পরীক্ষা স্থগিত করার ফলে সেশনজটসহ নানা সমস্যায় শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি হল কিংবা ক্লাস কার্যক্রম চালু না হলেও পরীক্ষা চলমান রাখার ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার অনুরোধ জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনার আলোকে পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যেহেতু দাবি জানিয়েছে তাই পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে আমরা উপরমহলের সাথে যোগাযোগ করবো।
আরও পড়ুন: বহিরাগতদের হয়রানির শিকার ইবির ৪ ছাত্রী
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা
ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষা চলবে: মন্ত্রণালয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধের চেষ্টা, আটক ১১
বাংলা বিভাগের রাজু গাজীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইলিয়াস কবির, অর্থনীতি বিভাগের ইমরান হোসেন প্রমুখ।
এর আগে মেসে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় টানা সাতদিন সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনের মাঝে ২৩ ফেব্রুয়ারি সকল পরীক্ষা স্থগিত করে ববি প্রশাসন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
আটকে থাকা পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে রুটিন হওয়া পরীক্ষাগুলো চালু করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদ জানান।
এর আগে মঙ্গলবার চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ৫৮টি সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা আটকে গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সর্বত্র স্বাভাবিক চলাচল থাকলেও হঠাৎ করেই চলমান পরীক্ষা বন্ধ করা অযৌক্তিক।
সোমবার অনলাইনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মহামারিতে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর গত ২০ ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অনেকগুলো পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও চলমান পরীক্ষাও আটকে গেছে।
এর আগে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুইদিন অবরোধ শেষে বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয় যে, কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের পরীক্ষা চলবে। এই ঘোষণার পরই অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
করোনার মহামারি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গত বছরের ১৬ মার্চ থেকে সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। বেশ কয়েকবার বাড়িয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি বাড়ানো হয়েছে।