পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার ও দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অগ্রগতি জানার পর ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ আমানতকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
পাঁচ আমানতকারী হলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে ড. নাশিদ কামাল, গৃহিণী সামিয়া বিনতে মাহবুব, মো. তরিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক মো. শওকতুর রহমান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত রাজিউল হাসান।
আরও পড়ুন: পিকে হালদারসহ পলাতকদের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচজন আজ হলফনামা করে আদালতকে একটি তালিকা দিয়ে বলেছেন যে পিকে হালদারের সাথে এদের যোগাযোগ আছে। অর্থপাচারের সাথেও এ ২৫ জন জড়িত। এরা যাতে বিদেশ যেতে না পারেন বা পালিয়ে যেতে না পারেন এবং তদন্তে যাতে তাদের পাওয়া যায় সে জন্য তারা (ক্ষতিগ্রস্তরা) একটি আবেদন করেছেন। সে মোতাবেক আমরা রাষ্ট্রপক্ষ তাদের সমর্থন দিয়েছি। পরে আদালত তাদের (২৫ জন) দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: পিকে হালদারকে ফেরাতে কী পদক্ষেপ, জানতে চায় আদালত
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্যরা হলেন হারুনুর রশিদ (ফাস ফাইনান্স), পিকে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সামি হুদা, পিকে হালদারের চাচাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী, অবন্তিকা বড়াল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) শামীমা, রুনাই, সুকুমার মৃধা (ইনকাম ট্যাক্স আইনজীবী), অনিন্দিতা মৃধা, তপন দে, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, অভিজিৎ চৌধুরী, রাজিব সোম, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, অঙ্গন মোহন রায়, নঙ্গ চৌ মং, নিজামুল আহসান, মানিক লাল সমাদ্দার, সোহেল সামস, পিকে হালদারকে বিভিন্নভাবে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারী মাহবুব মুসা, একিও সিদ্দিকী ও মোয়াজ্জেম হোসেন।
আরও পড়ুন: টাকা উদ্ধারে সহযোগিতা করতে দেশে ফিরতে চান পিকে হালদার
স্বরাষ্ট্র সচিবকে এ নির্দেশ দিয়ে আদালত আদেশে বলেছে, ‘অগ্রধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো, যাতে তারা কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে না পারেন।’
সংশ্লিষ্ট ২৫ জনের মধ্যে লীলাবতী হালদার, অমিতাভ অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, ইরফান উদ্দিন আহমেদ ও উজ্জ্বল কুমার নন্দীর পাসপোর্ট উচ্চ আদালতের নির্দেশে জব্দ রয়েছে।
গত বছরের ১৯ জানুয়ারি বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ পিকে হালদারসহ আইএলএফএসএলের ২০ কর্মকর্তার পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: অর্থপাচারকারী দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের তালিকা চেয়েছে হাইকোর্ট
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে পিকে হালদারকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেপ্তার করতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে ১৯ নভেম্বর স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওই আদেশ অনুসারে দুদক গত ২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করে।
গত ৯ ডিসেম্বর পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারী এবং সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়। একই সাথে পিকে হালদারের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে ৩ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: সরকার দুর্নীতি মামলা প্রত্যাহারে সুপারিশ করতে পারবে না: হাইকোর্ট
ধার্য তারিখ অনুসারে মামলাটির শুনানি শুরু হলে দুদক আইনজীবী আদালতের কাছে পাঁচ আমানতকারীর কথা তুলে ধরেন এবং তারা আদালতের সামনে কথা বলার অনুমতি চান। এরপর তারা আদালতের অনুমতি নিয়ে তাদের আমানত ফিরে পেতে আকুতি জানান। ওই দিন আদালত তাদের বক্তব্য লিখিত আকারে দিতে বলে। সে অনুসারে মঙ্গলবার তারা লিখিত বক্তব্য জমা দেন।