রাজধানীতে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে এবং ইমএমকে সেন্টার এর সহায়তায় বুধবার ‘প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন: গণমাধ্যমের ভূমিকা’- শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আয়োজক সংস্থার চেয়ারপারসন মহুয়া পাল।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাগণ সুযোগ পেলে সাফল্য অর্জন করতে পারে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালক ও প্রবন্ধ উপস্থাপক অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাতটি বিভাগের ১৬টি জেলার ৫০ জন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও ই-কমার্স প্লাটফর্মে যুক্ত করার মাধ্যমে তাদের ব্যবসা উন্নয়নে সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৫০ জন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাকে তিনদিন করে দুইটি ব্যাচে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য বিভিন্ন ই-কমার্স প্লাটফর্মে তাদেরকে যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলেন, ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষতার অভাব, ই-কমার্স ব্যবসা সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাব, প্রযুক্তিগত ধারণার অভাব, ব্যবসা শুরু ও সম্প্রসারণে মূলধনের অভাব, পরিবারের সহযোগিতা না পাওয়া, ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, টিআইএন ও অন্যান্য সনদ প্রাপ্তিতে বাধা, সরকারি এবং বেসরকারি ঋণ প্রদানকারী সংস্থা/ব্যাংক থেকে ঋণ প্রাপ্তিতে বৈষম্য, সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সব ধরণের প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য প্রবেশগম্য নয়, প্রতিবন্ধী নারীদের উৎপাদিত পণ্যের উপর ক্রেতাদের আস্থার অভাব, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা ও প্রকল্প থাকলেও এসকল সুবিধায় প্রতিবন্ধী নারীরা যুক্ত হতে পারে না, উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক নীতিমালায় প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই যেমন-এসএমই নীতিমালা-২০১৯ এ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি অনুপস্থিত।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কসমসের ভার্চুয়াল সভা বৃহস্পতিবার
তিনি বাধাসমূহ দূরীকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা দূর করতে গণমাধ্যম বিভিন্ন প্রচারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, সফল প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম গণমাধ্যমে তুলে ধরতে পারে, প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে এবং নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিশ্লেষণধর্মী এবং তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাব এর সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্যের কথা আমাকে বিষ্মিত করেছে। প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন সফল হওয়া কঠিন নয়, শুধু প্রয়োজন সহযোগিতা। আমাদের দায়িত্ব তাদের বিষয়গুলো সমাজের সামনে তুলে ধরা। আমি মনে করি রাষ্ট্রের উচিত তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমি আয়োজক সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই এ ধরনের কাজ করার জন্য। প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তার সাফল্যের কথা আমরা প্রচার করতে চাই। আমি উদ্যোগ গ্রহণ করবো যাতে সাংবাদিক বন্ধুগণ প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্যের কথা আরো বেশি করে প্রচার করেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি শাহনাজ শারমীন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের ৩টি বিষয় উল্লেখযোগ্য - তিনি পারেন, নারী হিসেবে পারেন এবং প্রতিবন্ধী নারী হিসেবে পারেন। একজন সাংবাদিক পারেন একজন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তার উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি বাড়াতে। কারণ, প্রচারেই প্রসার। তাই তাদের বিষয়গুলো নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
ইএমকে সেন্টারে এর সমন্বয়কারী (উদ্যোক্তা উন্নয়ন) আয়শা সিদ্দিকা বলেন, উদ্যোক্তা হওয়া সহজ নয়। কিন্তু প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তারা তা প্রমাণ করেছেন। প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ এই কঠিণ কাজটি করে যাবার জন্য।
প্রতিন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে নাটোর থেকে আরেফা পারভীন, সাতক্ষীরা থেকে অষ্টমী মালো, ময়মনসিংহ থেকে চুমকি বিশ্বাস এবং শেফালী আক্তার এবং ঢাকা থেকে কামরুন নাহার তাদের ব্যবসা চালাতে যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তা তুলে ধরেন এবং বাধা উত্তরণে গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তা কামনা করেন। সভায় সাংবাদিক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, সংস্থার কর্মী ও প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাসহ মোট ৫২ জন অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসের প্রথম ভার্চুয়াল আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে অনুপ্রেরণা: ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বক্তারা