চলতি বছরের নভেম্বরের ২৯ ও ৩০ তারিখ জাপান সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় দেশের বড় প্রকল্পে ‘বিনিয়োগ ও অর্থায়নের’ মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাপানের ‘শক্তিশালী সম্পৃক্ততা’ চাইবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন রবিবার ইউএনবিকে বলেন, ‘জাপান যেসব এলাকায় কাজ করছে (মেগা প্রকল্প) সেগুলো দেখে আমরা খুশি।’
তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি ‘ভাল বিনিয়োগকারী’ এবং তারা বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ জাপানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য আরও অর্থায়ন প্রত্যাশা করে।
মোমেন বলেন, ‘মূলত জাপান অর্থায়নে সক্ষম এবং তারা সবসময় কোনও কঠিন শর্ত ছাড়াই অর্থায়ন করে। তাদের প্রযুক্তিও আছে।’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, চাঁদপুরে শিবির কর্মী আটক
মোমেন আরও বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) তৃতীয় টার্মিনালের ব্যবস্থাপনায় জাপান ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশ আগ্রহী। ‘আমরা (সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য) দেখব এবং মূল্যায়ন করব।’
তিনি বলেন, জাপানও বন্দর সুবিধা প্রদান ও ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী। ‘আমরা এখনও কোন সিদ্ধান্ত নিইনি।’
দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর জন্য বাংলাদেশ অর্থায়ন খুঁজবে কি না জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘এটা একটা সমস্যা হতে পারে, তবে এটা নির্ভর করে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর।’
তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ রেল প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তি চাই। ‘এটাও একটা সমস্যা হতে পারে। এর সবই আলোচনায় আছে। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশও রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের ‘সরাসরি ভূমিকা’ চাইবে, কারণ তাদের প্রত্যাবাসন এখনও শুরু হয়নি।
বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু দেখতে চান এবং তার দেশ এ লক্ষ্যে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের শিকার রাখাইন রাজ্যের ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মাতৃভূমি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, জাপানি পক্ষ বাংলাদেশের কাছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করতে আগ্রহী, তবে বাংলাদেশের সাধারণ নীতি হচ্ছে আগে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা।
তিনি বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকারগুলো তুলে ধরে বলেন,‘আমরা প্রথমে আমাদের জনগণকে খাওয়াতে চাই, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা দিতে চাই। তারপর, আমরা অন্যান্য বিষয়গুলো দেখব।’
জাপান বাংলাদেশকে একটি ‘দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি’ এবং একটি ‘আকর্ষণীয়’ বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে মনে করে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশ সংযোগস্থলে অবস্থিত। জাপান একটি ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত প্রশান্ত ভারত’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসাবেও দেখে।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে ভারতীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কোনও ধরনের ‘অবরোধ ছাড়াই সকলের জন্য ‘মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং চলাচলযোগ্য’ হওয়া উচিত।
বাংলাদেশে মেট্রোরেলের আংশিক উদ্বোধনের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না জানতে চাইলে মোমেন বলেন, তারা বিষয়টি দেখবেন।
২০১৪ সালের মে মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে টোকিওতে শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠক করেন এবং তারা যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ-জাপান ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ চালু করেন। একই বছরের সেপ্টেম্বরে আবে ঢাকায় হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেন।
১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাপান বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরপূর্তি হয়।
মোমেন সম্প্রতি জাপান সফর করেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবের টোকিওতে তার রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান করে। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
আরও পড়ুন: দাম নিয়ন্ত্রণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়