প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদে খাদ্যশস্যের সঠিক সংরক্ষণে অত্যাধুনিক সাইলো বা গুদাম নির্মাণ একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। আর এ উদ্দেশ্যেই, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত কংক্রিট গমের সাইলো ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হচ্ছে স্টিলের তৈরি গমের সাইলো।
রবিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ গমের স্টিল সাইলো নির্মাণ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন।
সাইলো নির্মাণের প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশের কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও যুক্তরাস্ট্রের জিএসআই গ্রুপ এলএলসি। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ‘আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মিতব্য এই সাইলোটির নির্মাণকাজের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবে খাদ্য অধিদপ্তর।
সাইলোটিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত গম সংরক্ষণ করা যাবে। সংরক্ষিত গমের গুণগত মান নিশ্চিতে রাসায় না, যা প্রচলিত নিক দ্রব্য ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হবে খাদ্য গুদাম বা সাইলোতে সম্ভব নয়। দেশের স্থানীয় সরবরাহ কেন্দ্রগুলোতে শস্যের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ না থাকায় গুদামগুলোতে সব মৌসুমে ও দীর্ঘ সময়ব্যাপী শস্য মজুদ করা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে, দীর্ঘদিন গম সংরক্ষণে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে এ সাইলো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয় – তাই, আমাদের সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় আমরা আমাদের কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছি। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই দেশব্যাপী আধুনিক খাদ্যশস্য সংরক্ষণাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে; যাতে যেকোন সময় ও যেকোন অবস্থায় আমাদের দেশের মানুষের জন্য খাবারের যথেষ্ট মজুদ থাকে। সামনের দিনগুলোতেও আমরা আমাদের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’
বিশেষ অতিথি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন এ সময়োপযোগী পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এমন সব উদ্যোগের ফলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে; বিশেষ করে, দুর্যোগের মুহূর্তে খাদ্য নিরাপত্তা আরও জোরদার করা সম্ভব হবে, সে দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ৩৫ লাখ মেট্টিক টন খাদ্য মজুদের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার: খাদ্যমন্ত্রী
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রসঙ্গে কনফিডেন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান করিম বলেন, ‘উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের অদম্য যাত্রা যেন কোনভাবেই কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এ দায়িত্বেরই একটি অংশ। গুরুত্বপূর্ণ এই সাইলোর নির্মাণে আমাদের ওপর আস্থা রাখার জন্য আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। সাইলো নির্মাণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবার লক্ষ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাবো।’
প্রধান এবং বিশেষ অতিথিরা ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন, কনফিডেন্স গ্রুপের বোর্ড সদস্য রুপম কিশোর বড়ুয়া, ‘আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার’ প্রকল্পের পরিচালক মো. রেজাউল করিম শেখসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানে কনফিডেন্স গ্রুপের বোর্ড সদস্য রুপম কিশোর বড়ুয়া বলেন, ‘প্রকৌশল ও নির্মাণখাতে আমাদের বিশেষ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ওপর আস্থা রাখার জন্য আমরা সরকারকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। খাদ্যশস্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে আধুনিক সাইলো নির্মাণের এ উদ্যোগ আমাদের জন্য বিশেষ কিছু। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে আমরা আরেক ধাপ এগিয়ে যাবো। সবসময়ের মতো এবারও আমরা আমাদের মেধা এবং অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো।’
চট্টগ্রামের এ সাইলোটি সহ ‘আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার’ প্রকল্পের আওতায় দেশে ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আটটি স্থানে একটি করে মোট আটটি অত্যাধুনিক সাইলো নির্মাণ করা হবে, যার মধ্যে দু’টিতে গম এবং ছয়টিতে চাল সংরক্ষণ করা হবে। মোট আটটি স্থানের মধ্যে কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড (বাংলাদেশ) ও জিএসআই গ্রুপ এলএলসি (ইউএসএ) যৌথভাবে তিনটি স্থান যথা-বরিশাল এ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন এর চালের সাইলো, নারায়ণগঞ্জ এ ৪৮হাজার মেট্রিক টন এর চালের সাইলো ও চট্টগ্রাম এ এক লাখ ১৪হাজার ৩০০ মেট্রিক টন এর গমের সাইলো নির্মাণ করছে। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য দুর্যোগোত্তর জরুরি প্রয়োজনে সরকারি এবং পারিবারিক পর্যায়ে কার্যকর খাদ্য মজুদ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের এ সাইলো ক্যাম্পাসে ৫ একর অব্যবহৃত নিচু জায়গা উন্নয়ন করে সাইলো নির্মাণ উপযোগী করা হয়েছে। সমগ্র সাইলো নির্মাণাধীন এলাকায় সীমানা প্রাচীর এবং একটি তিনতলা সাইলো সাইট অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে, প্যাকেজ ডব্লিউ-২৪ এর আওতায় এক লাখ ১৪ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার এ গমের স্টিল সাইলো নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে।
চট্টগ্রামে নির্মিতব্য এ গম সংরক্ষণের সাইলোটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং জিএসআই গ্রুপ এলএলসির সাথে খাদ্য অধিদপ্তরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এ বছরের এপ্রিল মাসে। চুক্তি মোতাবেক নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ।
আরও পড়ুন: খাদ্যের অপচয় রোধে সতর্ক হওয়ার আহ্বান খাদ্যমন্ত্রীর