শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বিদ্যুতের তারের ফাঁদ পেতে বন্যহাতি হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে বনবিভাগ। মামলায় গ্রেপ্তার শহীদুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৩ থেকে ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সীমান্তের মধুটিলা ইকোপার্কের বাতকুচি টিলাপাড়ায় বন্যহাতির হত্যার ঘটনায় শনিবার (২ নভেম্বর) শহীদুল ইসলামকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালতের বিচারক তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে মামলাটি দায়ের করেছেন।
আরও পড়ুন: শেরপুরে বিদ্যুতের ফাঁদে বন্যহাতির মৃত্যু, আটক ১
তিনি বলেন, বন্যহাতি হত্যা মামলায় শহীদুলসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৩ থেকে ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসময় একটি জেনারেটর ও বেশ কিছু বৈদ্যুতিক তার জব্দসহ শহীদুলকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে বনবিভাগ।
বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় শহীদুলকে আটক করা হয়েছে এবং বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর ৩৬ (১)/৪২ ধারায় (অপরাধ ও সাজা) অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে শনিবার জুম প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে সারাদেশের বন্যহাতি অধ্যুষিত বনাঞ্চলের বন কর্মকর্তা ও বনকর্মীদের নিয়ে ভার্চুয়ালি একটি জরুরি সভা করেছেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) আমীর হোসাইন চৌধুরী।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা সেই সভায় বন্যহাতির বিচরণস্থলগুলোতে টহল জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বন কর্মকর্তারা।
শেরপুর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কার্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ কর্মকর্তা মো. আল-আমিন বলেন, আমাদের বনাঞ্চলের হাতিগুলো ‘এশিয়ান এলিফ্যান্ট’ জাতির। যা আইইউসিএন’র লাল তালিকাভুক্ত বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির একটি বন্যপ্রাণী।
এজন্য বন্যহাতি সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান শেরপুর বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ কার্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ কর্মকর্তা মো. আল-আমিন।
ওয়াইল্ড লাইফ কর্মকর্তা আরও বলেন, কুড়িগ্রাম থেকে শুরু করে শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ এ অঞ্চলের বন্যহাতি সুরক্ষায় সচেতনতামুলক সভা ও কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।
তাই আমাদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বন্যহাতির একটি দল বাতকুচি এলাকায় নেমে এলে কয়েকজন কৃষক ফসল রক্ষায় থানখেতে জেনারেটরের বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া তার ফেলে রাখে। রাত ১০টার দিকে মধুটিলা ইকোপার্কের বাতকুচি টিলাপাড়া এলাকায় বৈদ্যুতিক ফাঁদে একটি বন্যহাতির মৃত্যু ঘটে। আনুমানিক ১০/১২ বছর বয়সি মাদি হাতিটির মরদেহ শুক্রবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে ঘটনাস্থলেই মাটিচাপা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: চুনতিতে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি নিহতের ঘটনায় লোকোমাস্টার বরখাস্ত