প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফিলিস্তিনে চলমান সংঘাতের অবসানের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময়।
তিনি বলেন, ‘আমি নির্মম হত্যাযজ্ঞের মুখে অসহায় ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক, অমানবিক অস্তিত্বের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমাদের সকলের এক বিশ্ব হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সংঘাতের অবসানের দাবি জানানোর সময় এসেছে।’
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ভারত আয়োজিত দ্বিতীয় ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ সামিট ২০২৩ এ ভাষণ দেওয়ার সময় এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘এটি মূলত জাতিগুলোর মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব, যা ইউরোপে চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনে গণহত্যার দিকে পরিচালিত করেছে।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, এই সংঘাতগুলো যুদ্ধরত দেশ এবং জড়িত আন্তর্জাতিক অংশদের মধ্যে সত্যিকারের বিশ্বাস ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা তৈরি করার জরুরি প্রয়োজনের আহ্বান জানায়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ব অসহনীয় দারিদ্র্য, অনাকাঙ্ক্ষিত বৈষম্য, অসহনীয় সন্ত্রাসবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর হুমকিতে জর্জরিত।’
তিনি বলেন, গ্লোবাল সাউথের জনগণের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ও ক্রমবর্ধমান কষ্টের সঙ্গে এখন নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দেখা দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সংকটময় সময়ে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং 'সবার প্রবৃদ্ধি' অর্জনের জন্য 'সবার আস্থা' জোরদার করতে হবে।’
আরও পড়ুন: উদ্বোধন হওয়া ৩ উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল সাউথ আমাদের ভবিষ্যত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত, যদিও এটি প্রায়শই বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জের ঝুঁকিতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, ‘সবার আস্থার ভিত্তিতে আরও ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনে সক্ষম করার জন্য গ্লোবাল সাউথের জন্য আরও সুযোগ ও আওয়াজের অনুমতি দিয়ে এগুলো মোকাবিলা করা দরকার।’
তিনি এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, বিনামূল্যে আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু অভিযোজন অর্জনে গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি গ্লোবাল সাউথ এবং বিশ্বের উন্নতির জন্য কিছু সুপারিশ করেন। সেগুলো হলো-
প্রথম: শান্তির প্রবক্তা হিসেবে তিনি বিশ্বাস করেন, মানবতার সার্বিক কল্যাণের জন্য বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা সমুন্নত রাখা অত্যাবশ্যক।
‘গ্লোবাল সাউথকে অবশ্যই একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট বজায় রাখতে হবে।’
দ্বিতীয়: বৈশ্বিক জনসংখ্যার অর্ধেক হিসেবে নারীরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রাণবন্ত সমাজ গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘দীর্ঘসময় ধরে নারী নেত্রী হিসেবে আমি নিশ্চিতভাবে জানি, একটি উজ্জ্বল ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যতের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন একটি কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা।’
আরও পড়ুন: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
তৃতীয়: বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা অত্যাবশ্যক।
‘গ্লোবাল সাউথে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তি হস্তান্তর অপরিহার্য।’
চতুর্থ: প্রধান জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গ্লোবাল সাউথের উচিৎ সবার উন্নত জীবন প্রদান এবং আয়োজক ও স্বদেশ উভয় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার জন্য উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অভিবাসনকে সহজতর করা।
পঞ্চম: কোভিড-১৯ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সংঘাতের ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলো বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
‘আমি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গ্র্যাজুয়েশনের পরেও যথাযথ সময়ের জন্য শুল্ক, কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
পরিশেষে, তিনি বৈশ্বিক মানব উন্নয়নে দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
‘আমি উন্নয়ন অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অংশীজনদের আরো উন্নত ভবিষ্যতের জন্য গ্লোবাল সাউথকে উদারভাবে সমর্থন করার আহ্বান জানাই।’
ভারত শুক্রবার ভার্চুয়াল ফরম্যাটে সেকেন্ড ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটের আয়োজন করছে, যা এই বছরের জানুয়ারির পর দ্বিতীয়বার হচ্ছে।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় গ্লোবাল সাউথ সামিটে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী