বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে মাজেদকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেয়া হলো।
জেলার মাহবুবুল ইসলাম ফোনে ইউএনবিকে জানান, ‘রাত ১২টা ১ মিনিটে মাজেদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।’
ফাঁসির সময় মহাপরিদর্শক (কারা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা, ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ও ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুবুল ইসলাম জানান, পরে রাত আড়াইটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাজেদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে শুক্রবার মাজেদের সাথে তার পরিবারের সদস্যরা কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করেন।
বুধবার মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এর ফলে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পথে আর কোনো বাধা রইল না।
একই দিনে, বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আদালত। ওই দিন কারাগার থেকে মাজেদকে আদালতে হাজির করার পর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এম হেলাল চৌধুরী পরোয়ানা জারি করেন। এছাড়া আদালত তাকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একটি দল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মিরপুর থেকে মাজেদকে গ্রেপ্তার করে। পরে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এএম জুলফিকার হায়াত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান।
ওই দুর্ঘটনার রাতে নিহত ১৮ জন হলেন- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তার তিন ছেলে- ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল এবং দশ বছর বয়সী শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের, কৃষক নেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার স্ত্রী আরজু মনি, বেবি সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আরিফ এবং আবদুল নায়েম খান রিন্টু প্রমুখ।
এতে সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলও নিহত হন। একই দিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় খুনিদের চালানো কামানের গোলায় এক পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য মারা গিয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় মাজেদ, নূর ও মোসলে উদ্দিনসহ অন্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যায় দোষী সাব্যস্ত করে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে।
বঙ্গবন্ধুর পাঁচ হত্যাকারী সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে কার্যকর হয়।
আরেক খুনি আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার কারণে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ১২ সেনা কর্মকর্তার ফাঁসির রায় ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রাখে।
পলাতক আসামিরা হলেন- সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার আবদুর রশীদ, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলে উদ্দিন।
এর মধ্যে নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী এবং মোসলে উদ্দিনের অবস্থান সরকার জানতে পারলেও অন্য তিন পলাতক রশিদ, ডালিম ও মাজেদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না।
নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা যায়।