জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রাখতে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলার বিচার কার্যক্রম আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রবিবার (২২ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে গত ২২ জানুয়ারি এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
আদালতে এদিন বদির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম সোহেল। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির মামলা, অভিযোগ গঠন বাতিলে বদির আবেদন খারিজ
খুরশীদ আলম খান বলেন, এর আগে গত জানুয়ারিতে হাইকোর্ট জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আবেদন খারিজ করেছিলেন। এরপর মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রাখতে ফোজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় আবেদন করেন। আবেদনে তারা বলেন, এর আগেও সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগে তার তিন বছরের দণ্ড হয়েছে। তাই এ মামলা চলতে পারে না। হাইকোর্ট তার আবেদন খারিজ করে মামলার বিচার এক বছরের মধ্যে শেষ করতে বলেছেন।
উল্লেখ্য, ৫৬ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদ গোপন ও ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার ৭৯৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর বদির বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। দীর্ঘদিন স্থগিত থাকার পর ২০১৭ সালে এ মামলার কার্যক্রম সচল হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বদির অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন চট্টগ্রামের বিচারিক আদালত। ওই আদেশ বাতিল চেয়ে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিভিশন করেন বদি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: সম্রাটের জামিন আবেদন ফের নামঞ্জুর
এর আগে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক মো. আবদুস সোবহান ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি আবদুর রহমান বদি ২০১৩-২০১৪ কর বছরে তার দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৫ টাকার নিট সম্পদ প্রদর্শন করেন। কিন্তু ২০১৪ সালের ২০ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের সর্বমোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেছেন পাঁচ কোটি ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার ২৭২ টাকা। এ ক্ষেত্রে আসামি বদি তিন কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ২৮৬ টাকার সম্পদ গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন।
এ ছাড়া আবদুর রহমান বদি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেছেন ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯২ হাজার ৭২৩ টাকা। এ ক্ষেত্রেও বদি ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৪ টাকার সম্পদ গোপন করে মিথ্যা তথ্য সংবলিত সম্পদবিবরণী দাখিল করেছেন। আসামি বদি ইচ্ছাকৃতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে মিথ্যা তথ্য-সংবলিত সম্পদ বিবরণী দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারার অপরাধ সংঘটন করেছেন। এ মামলার বিচার শেষে ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগে বদিকে তিন বছরের সাজা দেয়া হয়। এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে সে জামিনে আছে।