নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা মেরিটাইম সেক্টর নিয়ে আরও কাছাকাছি আসতে পারে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কেননা করোনা মহামারিসহ অন্যান্য বৈশ্বিক সংকটের কারণে দুই দেশের মধ্যে অনেক আলোচনা স্থবির হয়ে গিয়েছে।
শুক্রবার (১২ মে) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: মৃতপ্রায় বিএসসি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। শ্রীলঙ্কায় কিছু সমস্যা হওয়ার কারণে সেই সভাটি হয়নি।
এছাড়া শ্রীলঙ্কার সংকটে বাংলাদেশ তাদের পাশে ছিল। কলোম্বতে পরবর্তীতে যে সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে, সেখানে মেরিটাইম সেক্টরের বিষয়গুলো আমরা চূড়ান্ত করতে পারবো।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং শ্রীলঙ্কার বন্দর, নৌ ও বিমানমন্ত্রী নিমল সিরিপালা ডি সিলভা নিজ নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন।
নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, কোস্টাল শিপিং বা উপকূলীয় নৌ চলাচল চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো চূড়ান্ত হবে আগামী সচিব পর্যায়ের বৈঠকে।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। পায়রা বন্দরে তারা বিনিয়োগে আগ্রহী। পায়রা বন্দর পরিদর্শনে তাদের একটি প্রতিনিধি দল আসবে।
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় না, দুই দেশ যাতে এগিয়ে যেতে পারে, সেটিই আমাদের মূল্য লক্ষ্য।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রী থারাকা বালাসুরিয়া ব্লু অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করেন। এগুলো পরবর্তীতে আলোচনা হবে।
এছাড়া শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করেন।
শ্রীলঙ্কার বন্দর, নৌ ও বিমানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন না, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে আমরা আরও এগিয়ে যাবো। আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কলম্বো বন্দরের মধ্যে জাহাজ চলাচল বাড়াতে আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে অর্থনীতির প্রধান হাতিয়ার হতে পারে মেরিটাইম সেক্টর: নৌপ্রতিমন্ত্রী
এছাড়া কলম্বো বন্দরে লজিস্টিক সহায়তা বাড়ানো হচ্ছে। যে কারণে এটি এখন আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বন্দরের জায়গা বেড়ে যাওয়ার কারণে সেখানে সহজেই বাংলাদেশের জাহাজ ভিড়তে পারবে। শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ীরা তৈরি পোশাক খাতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সাড়ে চার দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ীরা আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েছে। এতে বাংলাদেশের প্রতি তাদের বিশ্বাস ও আস্থা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পেতে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক কাঠামো নতুন করে সাজানো হচ্ছে।
সেখানে মেরিটাইম খাতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরে বিনিয়োগ করতে শ্রীলঙ্কার প্রাইভেট সেক্টর প্রস্তুত আছে। এটি বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের নতুন দৃষ্টান্ত হবে।
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ দুইটি ছোট দেশ হলেও, ভৌগোলিক কারণে আমাদের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
কারণ বাংলাদেশের অনেক রপ্তানি পণ্য কলম্বো বন্দর হয়ে যায়। আমরা এর পরিমাণ আরও বাড়াতে চাই। এতে বাংলাদেশের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, শ্রীলঙ্কার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী থারাকা বালাসুরিয়া, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এযমিরাল এম সোহায়েল, বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার নিযুক্ত হাইকমিশনার অধ্যাপক সুদর্শন সেনেভিরতে প্রমুখ।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিদল ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক দেশগুলোর সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে এনএমআই স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী