দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সততা, নেতৃত্ব এবং আত্মত্যাগের গুণাবলিতে উৎসাহিত হয়ে আপনাদের সর্বদা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার পাশাপাশি যে কোনও দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে।বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির (বিএনএ) মিডশিপম্যান ২০২০ আলফা ব্যাচ এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২২ ব্রাভো ব্যাচের উত্তীর্ণ ক্যাডেটদের প্রেসিডেন্ট প্যারেডে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থাকে এবং দক্ষতার সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই আমাদের কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করুক।’
গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় আপনারা আমাদের নৌবাহিনীর ভবিষ্যত নেতৃত্বদানকারী।
তিনি তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এবং শৃঙ্খলা ও সততার অনুভূতিতে সজ্জিত হয়ে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে বলেছিলেন।
আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকীকরণ করছে উল্লেখ করে
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে সক্ষম করার লক্ষ্যে তাদের আধুনিকায়নের কাজ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না, বরং সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে। ‘একটি স্বাধীন দেশ হওয়ায় আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং উন্নত সরঞ্জামে সজ্জিত করতে চাই, যাতে আমরা বাইরের শত্রুদের যে কোনও আক্রমণ প্রতিহত করতে পারি এবং যে কোনও যুদ্ধে জয়ী হতে পারি।’
তিনি বলেন, তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ক্রেতা থেকে নির্মাতা হতে চলেছে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী সামরিক জাহাজ ও ব্যবস্থার নির্মাতা হয়ে উঠছে যা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব ব্যবহারের জন্য স্থানীয় শিপইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী খুলনা শিপইয়ার্ডে পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফট এবং দুটি বৃহৎ পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণের কাজ শেষ করেছে। তিনি বলেন, আরও পাঁচটি টহল কারুশিল্প তৈরির কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনী তিন বাহিনীর জন্য আইএফএফ (বন্ধু ও শত্রুর পরিচয়) ব্যবস্থা প্রস্তুত করেছে। এখন নৌবাহিনী ‘ক্রেতা’ থেকে ‘নির্মাতা’ (সামরিক জাহাজ ও ব্যবস্থার) বাহিনীতে পরিণত হতে যাচ্ছে। এটি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে, স্থানীয় প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং দক্ষতা বাড়াবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের প্রথম টানেল।
তিনি বলেন, বিএনএস শের-ই-বাংলার নির্মাণ কাজ চলছে এবং কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি স্থায়ী সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছে এবং এখন তা বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে চারটি ফ্রিগেট, ছয়টি করভেট, চারটি বড় পেট্রোল ক্রাফট, পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফট এবং দুটি প্রশিক্ষণ জাহাজসহ মোট ৩১টি যুদ্ধজাহাজ যুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার দক্ষ কমান্ডো ও উদ্ধারকারী দল হিসেবে 'স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ কমান্ড' এবং নেভাল এভিয়েশন উইং প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ২০১৭ সালে দুটি সাবমেরিন যুক্ত করেছি। ফলস্বরূপ, আমাদের নৌবাহিনী আজ একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজ, ফিশিং ট্রলার, নৌকা এবং ব্লু ইকোনমি-সম্পর্কিত মেরিটাইম প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মোংলা কমান্ডার ফ্লোটিলা ওয়েস্টের অবকাঠামো উন্নয়ন করছি। নৌবাহিনীতেও ডিজিটাল প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ নৌবাহিনী সম্প্রতি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে 'ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ-২০২২'-এর আয়োজন করেছে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নৌবাহিনীর জন্য ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে একটি জমকালো কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে ২০২০ আলফা ব্যাচের মোট ৩৫ জন মিডশিপম্যানকে কমিশন দেয়া হয়, আর ২০২২ ব্রাভো ব্যাচের ছয়জন সরাসরি প্রবেশকারী কর্মকর্তা স্নাতক হন।
প্রধানমন্ত্রী দুই সেরা অলরাউন্ড মিডশিপম্যানকে সম্মানের তরবারি এবং সিএনএস স্বর্ণপদক এবং সরাসরি প্রবেশকারী সেরা কর্মকর্তাকে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক প্রদান করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সকল ধর্মীয় বিশ্বাস সমান অধিকার ভোগ করে: প্রধানমন্ত্রী