সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে দেশে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি দেশে বিদ্যমান ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, ‘এক টিমের সদস্য হিসেবে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা দেশের জন্য একটি টিম। আপনারা দেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে উঠুন, যা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত করবে।’
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আবাসিক প্রধানদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
শীর্ষ নির্বাহীরা বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘ট্রাম্পের সঙ্গে অভিন্ন ক্ষেত্র খুঁজে পাবেন অধ্যাপক ইউনূস’
বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত করতে লাইসেন্সিং এবং করহার ও করনীতির পূর্বানুমেয়তা নিশ্চিত করা, সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ উন্নত করা, বিডার ওয়ান-স্টপ সার্ভিস আরও কার্যকর এবং ক্রেডিট রেটিং উন্নত করার জন্য ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্যবসায়ী নেতারা শ্রম অধিকার সংস্কারের জন্য সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এক্ষেত্রে তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাহীগণকে ব্যবসা পরিচালনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা পরিচালনায় যেসব সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করতে সাহায্য করুন যাতে আমরা সেগুলোর সমাধান করতে পারি’।
এ সময় প্রধান নির্বাহীকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মানদণ্ড হিসেবে অভিহিত করে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আগে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। আমাদের সেটি দূর করতে হবে।’
আশিক চৌধুরী জানান, ব্যবসায় কার্যক্রম সহজ করতে বিডায় রিলেশনশিপ ম্যানেজার পদ চালু করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি ও বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী আগামী মাসে সিঙ্গাপুরে গিয়ে রেটিং এজেন্সিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই ব্যবস্থা ব্যবসা পরিচালনা উল্লেখযোগ্যভাবে সহজ করে দেবে।
আরও পড়ুন: ব্যাপক শ্রম সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ: অধ্যাপক ইউনূস
বৈঠকে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার, শেভরন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক এম. ওয়াকার, গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেডের (এইচএসবিসি) সিইও মো. মাহবুব উর রহমান, মেটলাইফ বাংলাদেশের সিইও মুহাম্মদ আলাউদ্দিন আহমদ, এসজিএস বাংলাদেশ লিমিটেডের কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুর রশিদ, সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এম. এইচ. এম. ফাইরোজ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসির সিইও নাজিথ মীওয়ানাজ, ওরাকল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুবাবা দৌলা, মারুবেনি কর্পোরেশনের কান্ট্রি হেড মনাবু সুগাওয়ারা, বারাকা পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফয়সল আহমেদ চৌধুরী, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী, ডিএইচএল ওয়ার্ল্ডওয়াইড এক্সপ্রেস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিয়ারুল হক এবং ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের কান্ট্রি হেড সুমিতাভ বসু উপস্থিত ছিলেন।