বাংলাদেশের প্রকৃত মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমপক্ষে ২ দশমিক ১ শতাংশ বাড়াতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) সহায়তা করবে বলে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাংলাদেশে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ১ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। এতে ১ দশমিক ৩ শতাংশ চরম দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়তা করবে।
বৃহস্পতিবার(২১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ‘দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইন বাংলাদেশ অ্যাচিভমেন্টস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিআরআই কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে তিনটি ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে- অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সহযোগিতা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়।
আরও পড়ুন: বিআরআই’র আঞ্চলিক সংযোগে অবদান রাখতে আগ্রহী বাংলাদেশ ও চীন
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণের উদাহরণ নিয়েও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মডেলিং পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে আনুমানিক জিডিপি, বাণিজ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য হ্রাসের উপর উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব নির্দেশ করে।
প্রতিবেদন অনুসারে, নির্দিষ্ট পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বিআরআই প্রকল্পগুলো অতিরিক্ত ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন থেকে ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
এ ছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিআরআই অবকাঠামো ও সংযোগ প্রকল্পগুলোতে চীনা বিনিয়োগ ও অর্থায়নের জন্য একটি অতিরিক্ত সুযোগ দেয়। এটি বাংলাদেশের সরবরাহ প্রতিক্রিয়া ও বাহ্যিক প্রতিযোগিতাকে উদ্দীপিত করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এটি বিআরআইয়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য থেকে জনগোষ্ঠীকে উন্নীত করার ক্ষেত্রে রূপান্তরকারী শক্তির প্রকাশ ঘটায়।’
এ ছাড়াও, প্রতিবেদনে উভয় দেশকে ব্যবসা সহজতর করতে, বিনিয়োগের বাধাগুলো শনাক্ত ও নির্মূল করতে এবং বিনিয়োগকারী ও ভোক্তাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি অনুকূল আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান প্রতিবেদনের বার্তা প্রসঙ্গে বলেছেন, চীনের বিআরআই বৈশ্বিক সহযোগিতা জোটের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চীনের আর্থিক বিনিয়োগ এবং চুক্তিভিত্তিক নির্মাণ বাধ্যবাধকতাসহ বিআরআই থেকে লাভবান হতে শুরু করেছে।
মান্নান বলেন, 'বিআরআইর বিনিয়োগ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক উন্নয়ন উদ্যোগগুলোতে অবদান রাখবে এবং ভিশন-২০৪১ অর্জনে সহায়তা করবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখেছি, বিআরআই বাংলাদেশের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ বাংলাদেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নে সক্ষম করেছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল খাতে এই বিনিয়োগ ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে এসেছে এবং সড়ক ও রেলপথে বিনিয়োগ বাংলাদেশের বাণিজ্য দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে এবং দেশ ও দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে দ্রুত যোগাযোগ নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, আমি নিশ্চিত যে, বিআরআইর কাঠামোর আওতায় আরও বেশি সংখ্যক চীনা উদ্যোগ ও জনগণ স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে নিজেদের নিয়োজিত করবে, চীনা সমাধান প্রস্তাব করবে এবং 'ভিশন ২০৪১' বাস্তবায়নে আরও বেশি অবদান রাখবে।
আরও পড়ুন: অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন ৪ সেপ্টেম্বর