বায়ু দূষণ রোধে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘দূষণের মাধ্যমে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। বায়ু দূষণের হাত থেকে মানুষকে বাঁচান।’
রবিবার এ বিষয়ে শুনানিকালে বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে এ মন্তব্য করেন।
আদালত বলেন, উচ্চ আদালত বায়ু দূষণ রোধে যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়ন হয়নি। অবৈধ ইটভাটাও বন্ধ করা হয়নি। দূষণের মাধ্যমে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। অনেকে বিদেশে থাকেন, তাদের ছেলে মেয়েরাও বিদেশে থাকে। ঢাকার বায়ু দূষণে তাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু আমরা তো এ দেশেই থাকি। এ দেশেই থাকতে হবে। বায়ু দূষণের হাত থেকে মানুষকে বাঁচান।
আদালত পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা যদি বাস্তবায়ন না করা হয়, পানি ছিটানো না হয় তাহলে আমরা প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তলব করে ব্যাখ্যা চাইব।
পরে আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে বায়ু দূষণ রোধে হাইকোর্টের দেয়া ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, পুলিশের আইজি, রাজউককে এই আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট
আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য দার্য করা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করীম।
২০২০ সালে ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে উচ্চ আদালত যে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
ওইদিন তিনি বলেছিলেন, আপনারা জানেন কয়েক দিন ধরে রিপোর্ট হচ্ছে, বিশ্বের সর্বোচ্চ বায়ু দূষণকারী শহর হচ্ছে ঢাকা। বায়ু দূষণে ঢাকার এই অবস্থান ধারাবাহিকভাবে একইরকম হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে যেন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। যেটা দিল্লিতে করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এখানে কারও কোনো খবর নেই। এখন পর্যন্ত ঢাকা শহর বায়ু দূষণে এক নম্বরে আছে, অথচ কেউ কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত এ বিষয়ে বলে যাচ্ছেন। পরে শুনানির পর গত ৩১ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এর আগে ২০২০ সালে বায়ু দূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।
৯ দফা নির্দেশনায় বলা হয়- ১. ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোকে ঢেকে পরিবহন করতে হবে। ২. যেসব জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে সেসব জায়গার কনট্রাকটররা তা ঢেকে রাখবেন। ৩. ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর নির্দেশ ছিল, এখনো পানি ছিটানো হচ্ছে না, সব সড়কে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ৪. সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণ কাজ এবং কার্পেটিংসহ যেসব কাজ চলছে, সেসব কাজ যেন আইন কানুন এবং চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে করা হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ৫. যেসব গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে হবে। ৬. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরাতন হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। ৭. যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীন চলছে, এর মধ্যে যেগুলো এখনো বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। ৮. পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধ করতে হবে। ৯. মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে হবে। এরপর মার্কেট ও দোকান বন্ধ হলে সিটি করপোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে: সিপিডি
পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকেই দায়িত্ব নিতে হবে: মেয়র আতিক