বর্তমান জ্বালানি ও গ্যাস সংকটকে সাময়িক আখ্যায়িত করে কয়েক মাস ধৈর্য ধরতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি-বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের দাম কমলে আমরা নিশ্চিতভাবে সে অনুযায়ী স্থানীয় দাম সমন্বয় করব।’
রবিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দয়া করে, এক-দুই মাস ধৈর্য ধরুন এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হোন। আগামী মাসের শেষের দিকে সরকার লোডশেডিং থেকে বেরিয়ে আসবে।’
তার দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সরকার পেট্রোলিয়াম জ্বালানির দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে যা বিশ্ব বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
‘এই যুদ্ধের প্রভাব সর্বত্র এবং আমরা এর বাইরে নই’, যোগ করেন তিনি।
জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্যাস কোম্পানি শেভরন যৌথভাবে ‘বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা: অস্থির আন্তর্জাতিক বাজার’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।
এফইআরবির সভাপতি শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জ্বালানি বিভাগের জ্যৈষ্ঠ সচিব মাহবুব হোসেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম ও অধ্যাপক এম শামসুল আলম। এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এফইআরবির নির্বাহী পরিচালক রিশান নাসরুল্লাহ অনুষ্ঠানটির সঞ্চলনা করেন।
আরও পড়ুন: জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার প্রধানমন্ত্রীর
পেট্রোলিয়ামের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাসের সংকট ও বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করায় বিরোধীদল বিএনপির নিন্দা করেন নসরুল।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাট ছাড়া আর কিছুই করেনি। এ কারণেই তারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’
বিএনপির সময়ে দিনে ১৬-১৭ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকত বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে গ্যাস নেয়ার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের অনুমতির বিষয়ে ভারতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি।
তিনি বলেন, ওই গ্যাস লাইন নির্মিত হলে আমরা মিয়ানমার থেকে কম দামে গ্যাস পেতাম।
তিনি বলেন, ‘অনেক ভূতাত্ত্বিক ও বিশেষজ্ঞ আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তারা পরামর্শ দিয়েছেন এলএনজি আমদানি করা ভালো হবে। কারণ আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে গ্যাস পেতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।’
আরও পড়ুন: জ্বালানি সংকটের পেছনে রয়েছে দুর্নীতি, লুটপাট, আত্মঘাতী চুক্তি: বিএনপি
তবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কনোকোফিলিপসসহ তিনটি বিদেশি কোম্পানিকে উপকূলীয় এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য চুক্তি দেয়া হয়েছিল।
প্রতিমন্ত্রীর দাবি, ‘কিন্তু একপর্যায়ে তারা গ্যাস ব্লকগুলো ছেড়ে দেয় এই বলে যে গ্যাস উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। কারণ তারা কম দামে অন্যত্র গ্যাস পেয়েছে।’
জ্যেষ্ঠ জ্বালানি সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ হাজার ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক বিডিংয়ের জন্য সরকার বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি এর প্রতিবেদন পাব এবং উপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হবে।’
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, সাম্প্রতিক দশকে গ্যাস অনুসন্ধানে উদ্যোগের অভাবে জ্বালানি খাতের সমস্যা বর্তমানে শাখা ও উপ-শাখায় প্রসারিত হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কার করেছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত পার্শ্ববর্তী গ্যাস ব্লক-১১ এ গ্যাস অনুসন্ধান করতে পারেনি বাংলাদেশ। কেন আমরা আমাদের এলাকায় অনুসন্ধান করতে ব্যর্থ হলাম এই প্রশ্নের উত্তর জরুরি।’
এম শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলপিজির মতো পেট্রোলিয়াম জ্বালানির দাম নির্ধারণের বৈধ কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) আইনকে অমান্য করে পেট্রোলিয়ামের দাম নির্ধারণ করেছে যার কোনো জবাবদিহিতা নেই।’