সোমবার বন্দর সেরি বেগওয়ানের এম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে বাংলাদেশ-ব্রুনাই বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে উন্নয়ন ও ব্যবসার সুযোগগুলোর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা পাওয়ার জন্য আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে অন্যতম উদার বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব সরকার। এ দেশ বিনিয়াগকারীদের জন্য আইনের দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা, উদার কর নীতি ও যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর শুল্ক অবকাশসহ নানা সুবিধা দিচ্ছে।
‘সেই সাথে আমরা শতভাগ বৈদেশিক ইকুইটি, বিধিনিষেধহীন প্রস্তান এবং লভ্যাংশ ও মূলধনের পূর্ণ প্রত্যাবাসন দেই। আমরা ইইউ, কানাডা ও জাপানসহ নেতৃস্থানীয় বিশ্ব বাজারের বেশিরভাগে অগ্রাধিকার সুবিধা ভোগ করি,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা জানান, চলতি জিডিপির হিসেবে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় এবং বিশ্বে ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতি। পাশাপাশি এ দেশের অর্থনীতি দৃঢ় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, উদ্দীপনাময় বেসরকারি খাত এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ হওয়ার পর এ বছর তা রেকর্ড ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে উন্নীত হবে। মাথাপিছু আয় এ বছর এক হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে, যা মধ্যম-আয়ের দেশে প্রবেশের কাছাকাছি।
‘শিল্প খাতের দ্রুত সম্প্রসারণ বাংলাদেশকে মাত্র পাঁচ বছরে বার্ষিক রপ্তানি আয় দ্বিগুণ করতে সক্ষম করেছে। কৃষি ও সেবা খাতে সুস্থিত প্রবৃদ্ধি আমাদের অর্থনীতিকে দিয়েছে আরও স্থিতিশীলতা ও স্থিতিস্থাপকতা,’ যোগ করেন তিনি।
এ উন্নয়নের জন্য বেসরকারি খাতকে কৃতিত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এটাই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ‘আমরা দেশি ও বিদেশি উভয় উদ্যোক্তা এবং বেসরকারি বিনিয়োগে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আমরা সারাদেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। সেই সাথে আমরা আইটি খাত প্রসারে কতগুলো শিল্প পার্ক স্থাপন করছি।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে খরচ, মানব সম্পদ, দেশীয় বাজারের আকার, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ, বাণিজ্য সহায়তা, বিনিয়োগ সুরক্ষা ও সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিচারে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক জায়গা হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতের সফলতা সারাবিশ্বে পরিচিত এবং এ দেশে চীনের পর বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত মানসম্পন্ন ওষুধের বড় বৈশ্বিক কেন্দ্র হয়ে উঠছে। এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকাসহ শতাধিক দেশে ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বমানের সমুদ্রগামী জাহাজ উৎপাদন করে বাংলাদেশের জাহাজনির্মাণ বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো ইউরোপসহ ১৪টি দেশে যাত্রী ও কার্গো জাহাজ সরবরাহ করেছে।
সফটওয়ারকে বাংলাদেশের আরেকটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ৮০০ সফটওয়ার ও আইটি কোম্পানির মধ্যে দেড় শতাধিক কোম্পানি বিদেশি গ্রাহকদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষায়িত। মাইক্রোসফট, ইন্টেল, আইবিএম, ওরাকল ও সিসকোসহ সারাবিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত আইটি কোম্পানিগুলোতে ২০ হাজারের অধিক বাংলাদেশি আইটি পেশাজীবী কাজ করছেন।
বাংলাদেশের কৃষি-ভিত্তিক পণ্য, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, হালকা-প্রকৌশল পণ্য ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বিশ্ব বাজারে নিজেদের উপস্থিতি তৈরি করে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
‘সারাবিশ্বে পরিবেশ নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মাঝে বাংলাদেশের জৈব-পচনশীল পাট ও বিকল্প পাট পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। আসলে, খুব প্রতিযোগিতামূলক দামে আমাদের বিস্তীর্ণ পরিসরের অন্যান্য মানসম্পন্ন পণ্যও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরও ব্রুনাইয়ে বিনিয়োগ ও তাদের সাথে ব্যবসা করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ সময় ব্যবসায়িক পর্যায়ের কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।