ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুটি অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা (আইসিটি)।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা বুলবুল কবির এবং মেহেদীর বাবা মো. সানাউল্লাহর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম অভিযোগগুলো দায়ের করেন।
মামলার আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো.হারুন অর রশিদ।
এসব অভিযোগে অজ্ঞাতনামা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, পুলিশ ও র্যাবের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছেন। সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, কোটা সংস্কার ও পরে হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শান্তিপূর্ণ, নিরস্ত্র শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ও স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া ব্যক্তিদের নির্দেশেই এই সহিংসতা চালানো হয়।
অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা বিক্ষোভকারীদের আংশিক বা পুরোপুরি নির্মূল করার চেষ্টার সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।
অভিযোগপত্রে ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের অন্যান্য নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। ওই বক্তব্যগুলোকে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘মোকাবিলায়’ছাত্রলীগই যথেষ্ট এবং কারফিউ চলাকালীন দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মিরপুরে শিক্ষার্থীদের হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
আইসিটি সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত শত শত হত্যাকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সংস্থাটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। এরপর আসামিদের গ্রেপ্তারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আতাউর রহমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার(১৫ আগস্ট) তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। গণহত্যার অভিযোগ যেহেতু সাম্প্রতিক ঘটনা, তাই প্রমাণ পেতে সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘মামলার অনেক আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। ফলে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের তাড়াহুড়ো করতে হবে না। তাই দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদনটি প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তরের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও এই মামলায় একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে এবং সংস্থাটি ঘটনার সময় পত্রিকা সংগ্রহ করে পর্যালোচনা শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।