তারা বলেন, দেশে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে আরও ভালো ও বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগের খাত সৃষ্টি করা উচিত যাতে জনগণ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত হয়।
বুধবার রাজধানীর এক হোটেলে ‘রুরাল ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রিনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশে’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। আর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী।
এসডিএফ চেয়ারম্যান এমআই চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম আশাদুল ইসলাম, বিশ্বব্যাংকের প্রাকটিস ম্যানেজার (কৃষি) লরেন রঞ্চি এবং এসডিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজেডএম শাখাওয়াত হোসেন।
মশিউর রহমান বলেন, দেশের দারিদ্র্য সমস্য সমাধানের জন্য জাতীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার এসডিএফ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থা এতে সহকারী হিসেবে যোগ দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনের অন্য কর্মসূচিগুলোকে অনুসরণ বা নকল না করে নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করা উচিত। নকল এড়ানো বোঝায় যে আপনি নতুন উদ্ভাবন প্রক্রিয়া জানেন।’
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দেশ সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তার মধ্যে একটি হলো বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় কম বেশি একই ধরনের কার্যক্রমে নিযুক্ত রয়েছে। আমাদের যখন দক্ষ ও উন্নত বিকল্প রয়েছে তখন আমাদের উচিত কম দক্ষ থেকে বেশি দক্ষ বিকল্পগুলোতে স্থানান্তরিত হওয়া। অন্যথায় আমরা স্বল্প-দক্ষ বিকল্পের জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করব এবং কম ফলাফল পাব।’
সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা উচিত উল্লেখ করে মশিউর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের বিনিয়োগের উপায়গুলো খুব অপর্যাপ্ত। সঞ্চয়পত্রের চেয়ে আরও ভালো ও বৈচিত্র্যপূর্ণ উপায় আমাদের থাকা উচিত যাতে করে মানুষ সঞ্চয় ও বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়।’
আরও উন্নত সেবা প্রদান এবং দ্রুত অগ্রগতির পথে সরকারকে সহায়তার জন্য পেশাদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যা করতে চান তা নিশ্চিত করতে হলে আরও বৃহত্তর পেশাদারিত্বের প্রয়োজন হবে।’
মূল বক্তব্যে অরিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু দেশের অর্থনীতি দ্রুত বিকাশ লাভ করছে, অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণের জন্য উচ্চ উৎপাদনশীল শ্রম প্রয়োজন, কারণ উচ্চস্তরের দক্ষতার চাহিদাও বাড়ছে। বাংলাদেশের জনমিতির সুবিধাগুলো ব্যবহার করতে মানবসম্পদে বিনিয়োগ প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, এসডিএফ সফলভাবে অনেক দারিদ্র্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এবং বর্তমানে নতুন জীবন জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্পটি (এনজেএলআইপি) শেষ করার চূড়ান্ত বছরে রয়েছে।
তিনি জানান, পল্লীর রূপান্তর প্রসারের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাস এবং নারী উদ্যোক্তা ও নারী নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলোকে সহায়তা দিতে এসডিএফ সক্রিয়ভাবে এনজেএলআইপিতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করছে, যার শিরোনাম হতে পারে ‘বাংলাদেশে গ্রামীণ রূপান্তর এবং উদ্যোক্তা বিকাশ।’
‘দরিদ্র ও চরম দরিদ্রদের জীবনযাত্রার উন্নয়ন, গ্রামীণ বিভিন্ন উদ্যোগের প্রচারণা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য’, যোগ করেন তিনি।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, দারিদ্র্য হ্রাস এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এটি এসডিএফের একটি বড় উদ্যোগ।
প্রশংসনীয় উন্নতি সত্বেও বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে উল্লেখ করে লরেন রঞ্চি বলেন, এনজেএলআইপিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এসডিএফ।
দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ও নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এসডিএফ অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে বলে জানান সংগঠনটির চেয়ারম্যান এমআই চৌধুরী।
তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ বিশাল সাফল্য অর্জন করলেও দারিদ্র্যতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। কারণ দেশের ২ কোটি ২৪ লাখ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।
দারিদ্র্য দূরীকরণে এসডিএফের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে এমআই চৌধুরী বলেন, তাদের সংগঠন আগামী দিনেও সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করবে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে সহায়তা করবে।