বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) রবিবার মুদ্রাস্ফীতি এবং বিনিময় হারের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে।
চাহিদার হার ও মুদ্রাস্ফীতি রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সুদের হার ০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ভোক্তাদের ঋণের হার ১২ শতাংশে উন্নীত করেছে।
নতুন মুদ্রানীতি কাঙ্খিত ৬ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) সমর্থন করার জন্য টার্ন লোনের (শিল্প ঋণ) ওপর ৯ শতাংশ সুদের হার জারি রাখে। যা অর্থনীতির উৎপাদনশীল ও কর্মসংস্থানের সুযোগে তহবিলের প্রয়োজনীয় প্রবাহ নিশ্চিত করে।
রবিবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার নতুন 'মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট (এমপিএস)' প্রকাশ করেন। ২০২২ সালের ১২ জুলাই গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটি তার প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা।
নীতি ঘোষণা করার সময় গভর্নর বলেছিলেন যে মুদ্রা বাজার প্রবাহ এবং সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে মুদ্রাস্ফীতি রোধ করার লক্ষ্যে মুদ্রানীতি তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনপিএল (নন-পারফর্মিং লোন) কমাতে এবং ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে।
আরও পড়ুন: জানুয়ারি থেকে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকবে না: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে দেশীয় ঋণ, অর্থ সরবরাহ, দেশীয় সম্পদ, বিদেশি সম্পদ কতটা বাড়বে বা কমবে তার একটি পরিকল্পনা পেশ করা হয়েছে।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী সাঈদুর রহমান, আবু ফারাহ মো. নাসের, একেএম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেসবাউল হকসহ বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি অর্থবছর ২০২২-২৩-এর দ্বিতীয়ার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে এটি ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
তবে বাজেট ঘাটতির কারণে সরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ কমেনি বরং ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে এবং সেইসঙ্গে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে রেপো রেট বা পলিসি রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।
এর অর্থ হলো ব্যাংকগুলো জরুরি প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিলে তাদের অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে।
এছাড়া, রিভার্স রেপোও ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ শতাংশ থেকে ৪.২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখলে ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে বেশি সুদ পাবে।
এছাড়া অর্থ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখতে হবে। কিন্তু গত নভেম্বর শেষে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশে।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ নেবে সরকার। সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে এক দশমিক ৬ লাখ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই সংখ্যা ২৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে আইএমএফ দল
প্রবাসীরা ১০ হাজার ডলারের বেশি কাছে রাখতে পারবেন না: বাংলাদেশ ব্যাংক