যথাযথ মর্যাদা ও ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের ৫০তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে।
দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ স্মারক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট গবেষক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ড. মো. ফরাসউদ্দিন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের অবদান বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবগাথা হয়ে থাকবে।
তিনি মুজিবনগরে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার মতো একটি ‘লিবার্টি বেল’ (স্বাধীনতার ঘণ্টা) স্থাপন ও সেখানে প্রতি বছর এপ্রিল মাসে মন্ত্রিসভার একটি প্রতীকী বৈঠক অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব করেন।
আরও পড়ুন: লকডাউনে বন্ধ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সেবা
এছাড়া তিনি মুজিবনগরে অবস্থিত বর্তমান যাদুঘরটি আরও সমৃদ্ধ করাসহ টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার ওপর এবং মুজিবনগরে মুজিবনগর সরকারের ওপর দুটি আলাদা গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রস্তাব করেন।
মুজিবনগর সরকার গঠনের পটভূমি ও ভূকৌশলগত তাৎপর্য তুলে ধরে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত মুজিবনগর সরকার আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমর্থন আদায়, শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনা ও মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’
হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাথা উঁচু করে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা একটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের কর্মযজ্ঞে অংশ নেয়ার জন্য নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী মুজিবনগরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড কেনেডির সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি মুজিব নগরকে ফিলাডেলফিয়ার সাথে তুলনা করেছিলেন যেখানে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিল।”’
এ প্রসঙ্গে তিনি মুজিবনগরকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে ফিলাডেলফিয়ার মতো কিছু সরকারি দপ্তর সেখানে স্থাপন করার আহ্বান জানান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির তার বক্তব্যে কুষ্টিয়ার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক পটভূমির বর্ণনা করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় মুজিবনগর সরকারের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: অটিজম সচেতনতায় সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস নীল আলোয় সজ্জিত
প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার মুজিবনগরকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রতীক হিসেবে অভিহিত করেন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রকে মুক্তিযুদ্ধের ১২তম সেক্টর হিসেবে উল্লেখ করে ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের অসামান্য ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, লন্ডন ভিত্তিক থিংকট্যাংক স্টাডি সার্কেলের সভাপতি ও যুক্তরাজ্যে ৭১-এর স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটির সদস্য সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, প্রবাসী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রগতিশীল নেতা সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন।
আরও পড়ুন:কাতারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল সৌদি আরব
অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের ওপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয় এবং এই ঐতিহাসিক দিবসের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রর্দশন করা হয়। যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এতে অংশ নেন।