করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ এবং ভয়াবহ বন্যার মধ্যেই রবিবার সারাদেশে মুসলমানরা তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা উদযাপন করবে।
বাংলাদেশের মুসলমানরা পশু কোরবানি এবং প্রতিবেশি ও দরিদ্রদের মধ্যে মাংস বিতরণ করে যথাযথ ধর্মীয় উৎসাহের মধ্যদিয়ে দিনটি উদযাপনের জন্য প্রস্তুত।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে পবিত্র ঈদুল আযহার প্রাক্কালে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিগত দু’টি বছর বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব করোনা মহামারির বিভীষিকার মধ্যেই ঈদুল-আযহা উদযাপন করেছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও ভবিষ্যৎ সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি পবিত্র ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে সরকার নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করার জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কল্যাণমুখী কাজে অংশগ্রহণের জন্য পবিত্র ঈদুল আযহার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাস মহামারি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহ বিপদে মানুষের ধৈর্যের পরীক্ষা নেন। এ সময়ে, সহনশীলতা ও সহানুভূতির সাথে অবিরাম ধৈর্য ধরে রেখে আমাদের একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে।’
তিনি স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
তবে আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে বা অন্য কোনো কারণে জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত না হলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের ঈদের প্রধান জামাতে ৩৫ হাজার মানুষ অংশ নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
পাঁচটি জামাতের মধ্যে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এছাড়া সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
পড়ুন: দেশবাসীকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত দুই বছর স্থগিত থাকার পর এবারও ঈদুল আযহায় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। শোলাকিয়া মাঠে ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে ।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল আযহা নির্বিঘ্নে উদযাপন নিশ্চিত করতে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
শনিবার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মো. কামরুল হাসান জানান, ঈদের দিন রাজধানীতে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যদিও আমাদের কাছে ঈদ উপলক্ষে সম্ভাব্য কোনো সন্ত্রাসী হামলার সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য নেই, তবুও আমরা কোনো ছাড় নিচ্ছি না।’
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের লোকজন শনিবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পরিদর্শন করেছে। আমরা গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের ওপরও নির্ভর করছি।’
তিনি আরও বলেন, রাজধানীর ঈদগাহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট এবং এলিট ফোর্সের ডগ স্কোয়াডকেও কাজে লাগানো হবে।
এদিকে র্যাব কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং ফুট ও মোবাইল টহল ইউনিট হাই অ্যালার্টে রয়েছে।
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হবে এবং আমরা নজরদারি রাখতে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যববহার করব।’
তিনি আরও বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহসহ বিভিন্ন ঈদগাহে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে এবং আমাদের এয়ার উইংও দায়িত্ব পালনে সক্রিয় থাকবে।
সকল মহানগরী ও জেলা-উপজেলাযর প্রবেশপথে বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হবে বলেও জানান তিনি।
শনিবার বেলা ১১টা থেকে পশুহাটের বর্জ্য অপসারণ শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং রবিবার দুপুর ২টা থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ শুরু হবে। এ কাজে মোট ৯ হাজার ৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত থাকবে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এদিকে ঈদের দ্বিতীয় দিনের মধ্যে কোরবানি সম্পন্নের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করি যে, অনেকেই ঈদের তৃতীয় দিনে কোরবানির পশু জবাই করে থাকেন। আমরা বিনীতভাবে নিবেদন করছি -তৃতীয় দিনের অপেক্ষায় যাতে কেউ না থাকেন। ঈদের দ্বিতীয় দিনের মধ্যেই যেন সকলেই কোরবানি সম্পন্ন করেন। কারণ বর্জ্য অপসারণে আমরা একটানা দীর্ঘ ৭২ ঘণ্টা কাজ করব। সেজন্য তাদেরও বিশ্রাম প্রয়োজন রয়েছে, ঈদের ছুটির প্রয়োজন রয়েছে।’