যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় ২২ ও ২৬ নম্বর যাত্রাপথে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’- বাস সেবা উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে মোহাম্মদপুরে এই বাস সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
এই কার্যক্রমের আওতায় ২২ নম্বর রুট (ঘাটার চর থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার) ও ২৬ নম্বর রুট (ঘাটার চর থেকে কদমতলী) পর্যন্ত ৫০টি বাস চলাচল করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন,‘পরিবহনের ও রাস্তার শৃঙ্খলা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। সিটি করপোরেশনের বাস রুট রেশনালাইজেশনের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের স্বার্থে এই উদ্যোগকে সফল করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘আমরা পরীক্ষামূলকভাবে (২১ নম্বর যাত্রাপথে) শুরু করেছিলাম। আমাদের কাছে সবচেয়ে প্রতিকূলতা ছিল যে, কি ধরনের বাস আমরা দিবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সে সময় ১৯’সালের যে বাসগুলো ছিল, সেই বাসগুলো দিয়ে শুরু করেছিলাম। কিন্তু এবার ঢাকাবাসির প্রত্যাশা পূরণকল্পে আমরা একদম নতুন নির্মিত ৫০টি বাস দিয়ে ২২ নম্বর যাত্রাপথ শুরু করছি। এখান থেকে পিছনে যাওয়ার আর সুযোগ নেই। এখন থেকে নতুন বাসই ঢাকা শহরে নামবে। কোনও পুরাতন বাস নামার আর সুযোগ থাকবে না। এখন থেকে ২০২২, ভবিষ্যতে ২০২৩; যখনই আমরা একেকটি যাত্রাপথ শুরু করব, আমরা নতুন বাস দিয়েই সেই যাত্রাপথ শুরু করব।’
নগর পরিবহনে সেবার মান ধীরে ধীরে আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন উল্লেখ করে ডিএসসিসি ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘আমাদেরকে এই তিনটি যাত্রাপথ শুরু করতে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমরা আশাবাদী, আমাদের পরীক্ষামূলক ২১ নম্বর যাত্রাপথ থেকে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে, সেটার মাধ্যমে আমরা এবার দুটো যাত্রাপথ শুরু করলাম। আগামী নভেম্বরে ২৩ নম্বর যাত্রাপথ আমরা শুরু করতে পারবো। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আমরা ঢাকা শহরের সকল যাত্রাপথে এই নতুন বাস দিয়ে ঢাকা নগর পরিবহনকে একটি সুশৃঙ্খল গণপরিবহন পরিণত করব।’
নগর পরিবহনের মাধ্যমে যাত্রীসেবার উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করা হবে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘আজকে আমরা আরও দুটি যাত্রাপথ শুরু করছি। একটি যাত্রাপথ ২৬ নম্বর যাত্রাপথ। এই যাত্রাপথের সকল বাস সেবা বিআরটিসি দিচ্ছে। আরেকটি যাত্রাপথ ২২ নম্বর যাত্রাপথ। এই যাত্রাপথে সম্পূর্ণভাবে বেসরকারিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। আপনারা দেখবেন, যে বাসগুলো এখন নামানো হচ্ছে সেই বাসগুলোর আসন অনেক মানসম্পন্ন। সুতরাং যাত্রীসেবার যে উৎকর্ষতা, সেই উৎকর্ষতা নগর পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকাবাসী পাবে।’
পরীক্ষামূলক যাত্রাপথে সেবা গ্রহণ করায় ঢাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘যে কোন শহরেরই গণপরিবহন ব্যবস্থা যতটা সুশৃঙ্খল হবে, যতটা কার্যকর হবে, যতটা বাস্তবসম্মত হবে; ততটাই সেই শহরটা বাসযোগ্য হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, গত বছর ২৬ শে ডিসেম্বর আমরা ঢাকা নগর পরিবহনের প্রথম পরীক্ষামূলক যাত্রাপথ শুরু করতে পেরেছি। ঢাকাবাসী এ ঢাকা নগর পরিবহনকে অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন ও সমাদৃত করেছেন এবং তারা সেই নগর পরিবহনের সেবা গ্রহণ করেছেন। আমি ঢাকাবাসীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রুটপারমিট বিহীন কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হবে না। এক রাস্তার গাড়ি আরেক রাস্তায় চলতে পারবে না।’
নিয়মিত সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে তদারকি করতে হবে উল্লেখ করে উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ যাত্রীদের কথা চিন্তা করে আমাদের কঠোর হতে হবে। এই নগরীকে বাসযোগ্য নগরী করে সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিতে হবে।’
মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এই বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজে যারা আসবেন তারা লাভবান হবেন। এই রুটগুলোতে অন্য বাস চলতে দেয়া যাবে না, এজন্য বিআরটিএ এবং ডিএমপির সহযোগিতা প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে নতুন বাস সেবা চালুর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
পরে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির মেয়র নগর পরিবহনের নতুন বাসে চড়ে শুক্রাবাদ যাত্রী ছাউনি যান এবং সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন যাত্রী ছাউনির উদ্বোধন করেন।
উল্লেখ্য, ঢাকার দুই সিটির রুট র্যাশনালাইজেশন প্রকল্পের আওতায় গত ডিসেম্বরে ঢাকা নগর পরিবহন পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছিল।