রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) চলমান মামলা পরিচালনায় ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা- ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা চেয়েছেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)।
বৃহস্পতিবার জেদ্দায় রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার বিষয়ে ওআইসি মন্ত্রী পর্যায়ের এডহক কমিটির বৈঠকে তিনি এ সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এটর্নি জেনারেল এবং গাম্বিয়ার বিচার বিষয়ক মন্ত্রী দাওদা জালো।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশ তাঁর সীমিত সাধ্যের মধ্যে ইতোমধ্যে আইসিজেতে মামলা পরিচালনার জন্য সেচ্ছাসেবী তহবিলে ইতোমধ্যেই পাঁচ লাখ ডলার দিয়েছে, এছাড়া ও সম্প্রতি আরও দুই লাখ ডলার দেয়ার পথে রয়েছে।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশে অবস্থানরত এক দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দেখভালের পাশাপাশি নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলারে ভাসানচরে নির্মিত নতুন অবকাঠামোতে তাদের একাংশকে স্বেচ্ছায় সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত আইসিজেতে মামলা পরিচালনার জন্য সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, কুয়েত, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, আফগানিস্তান এবং ইসলামিক সলিডারিটি ফান্ডসহ কয়েকটি দেশের স্বেচ্ছামূলক অবদান এবং অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, অনেক দেশের সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার পরও প্রাপ্ত অর্থ প্রয়োজনীয় পরিমাণ থেকে অনেক কম, তাই তিনি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা পরিচালনার জন্য উদারভাবে অবদান রাখার আহবান জানান।
রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা দায়েরের জন্য গাম্বিয়ার প্রতিনিধিদল, ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র এবং ওআইসি সচিবালয়ের প্রতি রাষ্ট্রদূত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মাধ্যমে এর সমাধান একটি দীর্ঘমেয়াদী বিষয় এবং আমাদের অবশ্যই এর প্রতি নিবিড় কার্যক্রম বজায় রাখতে হবে। এটি একটি বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার প্রদানের প্রশ্ন যারা তাঁদের জাতিগত অস্তিত্বের অধিকার থেকেও বঞ্চিত।
তিনি আরও বলেন, গাম্বিয়ার দায়ের করা এ মামলার প্রতি আমাদের সকলের পূর্ণ সংহতি, সমর্থন এবং সহযোগিতা প্রয়োজন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ২০১৭ সালে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরের পর ও মিয়ানমারে আমরা একজন শরণার্থীও ফেরত পাঠাতে পারিনি এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর জন্য মিয়ানমারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারিনি। তিনি ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় উক্ত এলাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর যে আর্থসামাজিক চাপের সৃষ্টি হয়েছে ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হলে তার সুদূরপ্রসারী স্থানীয় ও আঞ্চলিক নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, রোহিঙ্গাদের তাঁদের নিজ দেশে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সার্বক্ষণিক সমর্থন কামনা করে। রোহিঙ্গাদের তাঁদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা এবং তাঁদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার জন্য আইনি সহায়তা প্রদান করা আমাদের দায়িত্ব। এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার এবং মানবতার উন্নতির জন্য দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন: উখিয়া ক্যাম্পে ২ রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা, আটক ২
সভার শুরুতে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বিচারাধীন এই মামলাটির বর্তমান অবস্থা, এর বিভিন্ন দিক ও সামনের পরিকল্পনা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, এই মামলাটি ওআইসি ও বিশ্বের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
তিনি প্রত্যাশা করেন, আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে এই মামলাটি নিষ্পত্তি হবে।
এছাড়া তিনি ওআইসি’র সকল সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন ও মামলা পরিচালনার জন্য সহায়তা কামনা করেন।
ওআইসি মহাসচিব তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা প্রদান, তাদের অধিকার আদায়ে একযোগে কাজ করা ওআইসি’র নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তিনি এ বিষয়ে ওআইসি সচিবালয়ের সার্বক্ষণিক সহায়তার আশ্বাস দেন ও এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সমর্থন ও সহায়তার অনুরোধ জানান।
এই বৈঠকে সৌদি আরব, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ক্যামেরুন, ফিলিস্তিন, মালদ্বীপসহ অন্যান্য দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য ইইউ’র ৩ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা ঘোষণা