রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান খুঁজতে ফ্রান্স দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন। ফরাসি নেতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন,‘আমরা দৃঢ়ভাবে আপনাদের (বাংলাদেশ) পাশে থাকব যাতে এই সঙ্কট স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমে শেষ হয়।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও প্রধানমন্ত্রী জিন কাস্টেক্সসহ ফ্রান্সের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মোমেন এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের সব নেতা বিশেষ করে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ উঠে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফরাসি নেতাদের জানানো হয় যে দেশটি বিভিন্ন মাধ্যমে সংকটের স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেবে ফ্রান্স: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং বহুপাক্ষিকভাবে চেষ্টা করছি। এমনকি আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও গিয়েছি।
তিনি উল্লেখ করেন, সমস্যাটি মিয়ানমার তৈরি করেছে এবং সমাধানও তাদের কাছেই রয়েছে।
মোমেন বলেন, আমরা তাদের (ফরাসি নেতাদের) বলেছি যে পশ্চিমা বিশ্ব এখনও মিয়ানমারের সাথে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ওপর চাপ তৈরি করার জন্য এটি বন্ধ করতে হবে।
মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেদেশের সামরিক শাসকদের সাথে বৈঠক সম্ভব কি না সে ব্যাপারে ফরাসি নেতারা জানতে চেয়েছেন।
আরও পড়ুন: অটিজমবান্ধব সমাজ বিনির্মাণে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছি মিয়ানমারে ৭০ ও ৯০ এর দশকে সামরিক সরকার ছিল যখন তারা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করেছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৯২ সালে প্রায় দুই লাখ ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল এবং তাদের মধ্যে দুই লাখ ৩৬ হাজার সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে ফিরে গেছে। একই ঘটনা ১৯৭০-এর দশকে ঘটেছিল।
মন্ত্রী বলেন,আমরা তাদের (ফ্রান্স) জানিয়েছি যে গত চার বছরে রাখাইন রাজ্যে কোনো সংঘর্ষ বা সহিংসতা নেই। সুতরাং, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এটাই সঠিক সময়।
প্রতিবেশিদের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও বৈঠকে ফরাসি শীর্ষ নেতাদের অবহিত করা হয়।
মোমেন বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছিল। তারা বলেছিল নিশ্চিত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেবে। তারা তাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতেও সম্মত হয়েছিল। কিন্তু তারা কিছুই বাস্তবায়ন করছে না।
আরও পড়ুন: প্রত্যাবাসন ঠেকাতেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ড: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ফরাসি নেতারা রোহিঙ্গা ইস্যুটি অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসকে (আসিয়ান) অবহিত করা হয়েছে কি না জানতে চেয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা আসিয়ানকে জানিয়েছি। ফ্রান্স আসিয়ানের সাথে কথা বলে শক্ত পদক্ষেপ নিতে বলেছে।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ফরাসি নেতাদের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে নিতে আসতে বলেছে।
ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।