প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাপান মধ্যস্থতা করতে পারে এবং রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করতে পারে।
জাপানের সর্ববৃহৎ ইংরেজি দৈনিক দ্য জাপান টাইমস-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেন, ‘এখন তারা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশ ও পুরো অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠছে। জাপান মধ্যস্থতা করতে পারে এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সহায়তা করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের জাপান সফরকালে গত ২৫ এপ্রিল 'জাপান হোল্ডস আ স্পেশাল প্লেস ইন আওয়ার হার্টস' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে জাপান টাইমস।
শেখ হাসিনা বলেন, গণহত্যার মুখে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ছয় বছরে বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ নাগরিকের যত্ন নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৪ দিনের জাপান সফর শেষে শুক্রবার ওয়াশিংটন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘তাদের প্রাপ্য উপস্থিতি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।’
তার সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেশ, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে আমি আবার টোকিওতে এসেছি, যখন আমাদের দেশগুলো কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫১তম বার্ষিকী উদযাপন করছে। আমি সম্রাট নারুহিতো ও সম্রাজ্ঞী মাসাকোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি বাংলাদেশের মহান বন্ধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকেও শ্রদ্ধা জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। এমনকি ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও জাপান প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করেছিল, যা আমরা কখনও ভুলিনি এবং কখনও ভুলব না।’
তিনি বলেন, সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ছিল জাপানি স্কুল শিক্ষার্থীদের দাতব্য উদ্যোগ, যারা তাদের টিফিনের অর্থ সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ও আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দেওয়া যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা করার জন্য দান করেছিল। তারপর থেকে জাপান আমাদের সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু হয়ে আছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাপান আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি দেশ, ঠিক যেমন এটি আমার পরিবার ও আমাদের জনগণের জন্য। আমার বোন শেখ রেহানা ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে আমাদের বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমাদের কনিষ্ঠ ভাই শেখ রাসেলের সঙ্গে জাপানে তাদের প্রথম সফরে গিয়েছিলেন। আমার বাবা জাপানের উন্নয়নে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং দেশটিকে একটি মডেল হিসেবে অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, জাপানি পতাকার নকশায় বঙ্গবন্ধুও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। উভয় পতাকাই আয়তক্ষেত্রাকার ও মাঝখানে লাল বৃত্ত, এর চারিদিকে বাংলাদেশের পতাকায় রয়েছে সবুজ ও জাপানের পতাকায় সাদা রঙ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ এর উন্নয়নের জন্য অবিচল সমর্থন পেয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে জাপানের কাছ থেকে সর্বাধিক সরকারি উন্নয়ন সহায়তা পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ওডিএ ঋণ প্যাকেজে জাপান বাংলাদেশকে দুই দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার সফট লোন দিয়েছে, যা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো চার বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
আরও পড়ুন: জাপানের ‘মিরাইকান’ জাদুঘর পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী