র্যাবের ওপরে যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেটা খুব শিগগিরই উঠে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন।
র্যাব বর্তমানে যে কার্যক্রম করছে তাতে মার্কিন সরকার সন্তুষ্ট জানিয়ে তিনি বলেন, তারা বলেছেন যে নিষেধাজ্ঞা উত্তরণে বাংলাদেশ সঠিক পথেই হাঁটছে। আমাদের ল'ইয়ার ভালো ভূমিকা রাখছে। যেভাবে চলছে তা চলমান থাকলে আমাদের ওপর থেকে অচিরেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানান।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ঢাকা সফর করে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিন ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। দুই দিনের সফরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও সৌজন্য বৈঠক করেন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ১৫ জানুয়ারির বৈঠকে র্যাবের ওপরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনায় হয়। এ নিয়ে সোমবার ( ১৬ জানুয়ারি) বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ডোনাল্ড লু এর সঙ্গে সৌজন্য বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার সঙ্গে আমাদের কয়েকজন মন্ত্রীর একান্তে মিটিং হয়েছে। আমার সঙ্গে তার আন্তরিক ও সৌহার্দপূর্ণ খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। সেখানে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। তাতে আমার যা মনে হয়েছে,বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা বন্ধ হোক আমেরিকার সরকার তা চায় না।
তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দেখতে চায়। তারা চায় এদেশের মানবাধিকার যেন আরও ওপরে থাকে। তারা চায় এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। কেউ যেন সহিংসতায় লিপ্ত না হয়। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদেরকে বলেছি অতীতে আমরা কিভাবে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবিলা করেছি। তারা এর প্রশংসা করেছেন।
আরও পড়ুন: সরকার সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য ‘আইএলআইএস’ চালু করবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আলোচনায় নির্বাচনের প্রসঙ্গে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের যে সংবিধান আছে সে অনুযায়ী আমাদের দেশের নির্বাচন হবে। নির্বাচনের ৯০ দিন আগেই আমাদের সকল ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে যায়। আমাদের সরকারের সব কিছু তারা নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা মন্ত্রীরা শুধু অফিসওয়ার্ক করি। কাজেই আমি মনে করি আমাদের পুলিশবাহিনীসহ যারা সব সময় নির্বাচন কাজে থাকে, তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে।
তিনি বলেন, বিএনপিকে আমরা যে বিভিন্ন জনসভা করতে দিচ্ছি, এজন্য তারা আমাদের প্রশংসা করেছেন। তবে সমাবেশের নামে অগ্নিসংযোগ,ভাঙচুর ও রাস্তায় ব্যারিকেড; এসব বিষয় আমেরিকার সরকার সমর্থন করেনা।
র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে তিনি ডোনাল্ড লু-কে বলেছেন, র্যাবকে আপনারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। ২০০৪ সালে আপনারাই র্যাবকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়েছেন। শুধু র্যাবকে নয় পুলিশের অনেকবাহিনীকে অস্ত্র দিয়েছেন। তাদের ভালো কর্মদক্ষতার জন্য সব সময় প্রশংসা করেছেন। আত্মরক্ষার জন্য এই বাহিনীরও অস্ত্র হাতে নিতে হয়। তবে প্রতিটা গুলির জন্য আমাদের একজন ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করে জানালে আমরা সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেই।
তিনি বলেন, র্যাবের ১৮ জন সদস্য জেলে শাস্তি ভোগ করছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর। আপনারা দেখছেন গত ১৫ বছর আগে যেটা ছিলো, সেখানে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি। তারাও বলেছেন বিগত দুই বছরে র্যাব ভালো কাজ করেছে। র্যাব ভালোভাবে জঙ্গি ও মাদক মোকাবিলা করেছে।
নিষেধাজ্ঞা তোলার প্রক্রিয়া জটিল বলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও, একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রত্যাহার করতে হবে। সে প্রক্রিয়াটা একটু জটিল। এই প্রক্রিয়ায় কতোগুলো ধাপ আছে, সেগুলো পার হতে হয়।
আরও পড়ুন: নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী