সিলেট-ঢাকা রুটে এবার দেখা দিয়েছে বিমানের টিকিট সংকট। আবার টিকিট পাওয়া গেলেও যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্য। এতে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে এ রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটগুলো ডোমেস্টিক ফ্লাইটের যাত্রীদের পরিবহন করছে না। এ কারণে এ রুটে টিকিটের কিছুটা সংকট চলছে। দামও আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।
ইউএস বাংলা ও বিমানের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ১৪ জানুয়ারি সিলেট-ঢাকা রুটে ইউএস বাংলার ভাড়া ছয় হাজার ৪০০ টাকা, ১৫ জানুয়ারি ইউএস বাংলার ভাড়া চার হাজার ৯০০ টাকা, বিমানের তিন হাজার ৮৩৩ টাকা, তিন হাজার ৯৫০ টাকা ও পাঁচ হাজার ১০০ টাকা। এছাড়া ১৬ জানুয়ারি ইউএস বাংলা তিন হাজার ৭৬৫ টাকা, বিমানে তিন হাজার ৫৫৬ টাকা ভাড়া।
আরও পড়ুন: অনলাইনে বিমানের টিকিট বিক্রি সাময়িক বন্ধ
এ রুটের যাত্রী সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আবাসন ব্যবসায়ী মুহাম্মদ মুনতাসির আলী জানান, তিনি নিয়মিত এ রুটের যাত্রী। কিন্তু প্রায়ই তাকে টিকিট সংকটে পড়তে হয়। এ সংকট উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সকলের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও সিপার এয়ার সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, সিলেট-ঢাকা বিমান রুটে টিকিটের চাহিদা ব্যাপক। তাই এ রুটে শিগগিরই বোয়িং চালু করা জরুরি। সিলেট-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার এই তিনটি এয়ারলাইন্সের বিমান আসা-যাওয়া করে। কিন্তু যাত্রী পরিবহন করে কূল পাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় সময়ই সাড়ে তিন হাজার টাকার টিকিট কিনতে হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায়।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েকদিন আগে আয়োজিত গণশুনানিতে শাফি নামের একজন যাত্রী জানান, ঢাকা থেকে বিমানের একটি ফ্লাইটের একটি টিকিট তাকে ১০ হাজার টাকা মূল্যে কিনতে হয়।
সূত্র জানায়, বিমানের বোয়িং-এ করে প্রায় এক মাসের অধিক সময় ধরে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফলে সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই সুযোগে বিমানের পাশাপাশি বেসরকারি বিমান অপারেটরগুলোও তাদের টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ বিমানের জেলা ব্যবস্থাপক মনসুর আহমদ ভুঁইয়া জানান, বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ওসমানীতে আসা ফ্লাইটগুলো ইতোপূর্বে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন করতো।
কিন্তু ১ ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটগুলো ডোমেস্টিক ফ্লাইটের যাত্রীদের পরিবহন করছে না। এ কারণে এ রুটে টিকিটের কিছুটা সংকট চলছে। দামও আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া বোয়িংয়ে যাত্রী পরিবহন করা গেলে এ সংকট থাকবে না বলে মন্তব্য এই কর্মকর্তার।
বিমানের অন্য একটি সূত্র জানায়, প্রতি সপ্তাহে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সিলেট-হিথরো চারটি, সিলেট-ম্যানচেস্টার তিনটিসহ দুবাই-শারজাহ-জেদ্দা মিলিয়ে মোট ১৫টি ফ্লাইট অপারেট হয়। ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত এসব ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের প্রায় পাঁচ হাজার যাত্রী অপারেটর করা যেতো। প্রতিটি বোয়িংয়ের ধারণ ক্ষমতা ছিল সাড়ে তিনশ’। বর্তমানে ড্যাশ-৮ ও এটিআরসহ যেসব ফ্লাইট অপারেট হচ্ছে, সেগুলোর যাত্রী ধারণক্ষমতা ৬০-৬৫ জন। যে কারণে এ রুটে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে।
এদিকে, বিমান ও ট্রাভেল এজেন্সি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে সিলেট-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমান ছাড়াও ইউএস বাংলা ও নভোএয়ারের ফ্লাইট চলাচল করছে।
সবমিলিয়ে প্রতিদিন এ রুটে ১০-১২টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল করলেও এর মাধ্যমে যাত্রীদের টিকিটের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি জহিরুল কবির চৌধুরী শীরু বলেন, এবার দেশে প্রবাসীদের ব্যাপক আগমনের কারণে অভ্যন্তরীণ রুটে টিকিটের কিছুটা সংকট চলছে। এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী অপারেটরগুলোর ৮০ পার্সেন্ট টিকিট বুকড হয়ে গেলে বাকি ২০ পার্সেন্ট টিকিটের দাম বৃদ্ধি হয়ে যাচ্ছে পিক টাইমের কারণে। এছাড়া তিনি এ রুটে ডোমেস্টিক ফ্লাইট বৃদ্ধির দাবি জানান।