রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের এক উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।
ভুক্তভোগী চিকিৎসকের নাম আবুল কালাম আজাদ।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৩ সদস্য আটক
তিনি ছাড়াও রাতে জরুরি বিভাগে কর্মরত ছিলেন আঁখি বিশ্বাস নামের এক নারী চিকিৎসা কর্মকতা ও এক সহকারী। তবে তাদের কাছ থেকে কিছু নেয়নি।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার দুপুরে মো. রনি (২৭) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
আটক রনি গোয়ালন্দ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড হাউলিকেউটিল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আব্দুল গনির ছেলে। তার কাছ থেকে মুঠোফোনটি উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, রবিবার রাত ১১ টার দিকে জরুরি বিভাগের পাশের কক্ষে ডা. আঁখি বিশ্বাস এবং আরেক কক্ষে তিনি বিশ্রামে ছিলেন। সাড়ে ১১ টার দিকে দুই তরুণ আমার কক্ষে প্রবেশ করেন। কারণ জানতে চাইলে তাকে (চিকিৎসক আজাদ) চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার কথা বলেই মাথায় পিস্তল ঠেকায়। তিনি ধাক্কা দিলে পিস্তল দিয়ে মাথায় আঘাত করলে আহত হন। কক্ষ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে অপরজন ধারালো চাকু বের করে তার মুঠোফোন ও নগদ ছয় হাজার ১৪০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় হাসপাতালের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের একটি দল টহল দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে তারা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসেন।
এদিকে এর আগেও হাসপাতালে একাধিকবার চুরি ও চিকিৎসকদের কক্ষের তালা ভাঙ্গার ঘটনায় চিকিৎসকসহ সকলের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দুর্ঘটনার পর সোমবার সকাল ৯টার পর থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত বর্হিবিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ থাকে। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অনেক রোগী চিকিৎসা বঞ্চিত হন।
দৌলতদিয়া থেকে আসা রাকিবুল ইসলাম নামের এক তরুণ বলেন, সকালে প্রায় দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করেও কোন চিকিৎসক পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক জানান, এর আগেও হাসপাতালের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের তার দুইবার কেটে নেয়া, চিকিৎসকদের কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করা এবং আরএমও'র অফিস কক্ষ থেকে কম্পিউটার চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা থাকলেও প্রতিটি ঘটনার সময় সিসি ক্যামেরার মাদারবোর্ডের পাওয়ার সুইচ প্লাক খোলা ছিল। এর সঙ্গে হাসপাতালের কোন চক্র জড়িত রয়েছে বলে অনেকের ধারণা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, একের পর এক দুর্ঘটনা এবং রবিবার রাতে হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়ায় চিকিৎসকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, সোমবার সকালে ওসির উপস্থিতিতে সিসি ক্যামেরার মাদার বোডের পাওয়ার প্লাক খোলা দেখতে পাওয়া যায়। চিকিৎসক জীবনে এমনটি আগে দেখিনি।
এছাড়া সকালে চিকিৎসকদের সঙ্গে করণীয় বিষয়ে বৈঠকে বসলে সাময়িক সময়ের জন্য চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, দ্রুততার সঙ্গে রহস্য উদঘাটনে অভিযান কার্যক্রম শুরু করেছি।
ইতোমধ্যে দুপুরে জড়িত থাকার অভিযোগে হাউলিকেউটিল এলাকা থেকে মো. রনি (২৭) নামের এক তরুণকে আটক করা হয়েছে। তার কাছ থেকে মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়েছে। আশা করি রহস্য উদঘাটন এবং অপরজনকেও আটক করা সম্ভব হবে।